বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রকল্প থেকে যাবতীয় খরচ বহনের কথা ছিল। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কোনো খরচ দেয়া হয়নি। এছাড়া উৎপাদিত ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের ফতেপুর-জাফরনগর গ্রামে (ফতেপুর ব্লক) বোরো মৌসুমে সমলয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প থেকে কৃষকদের যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল তার বেশিরভাগই পাননি। অধিকাংশ কৃষককেই চারা রোপণ, সার, কীটনাশক পরিচর্যা, ধান কাটা ও মাড়াই নিজ খরচে করতে হয়েছে। অথচ প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ বপন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে ধানের চারা রোপণ, বালাইনাশক, সার, কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান মাড়াই ও ঝেড়ে দেয়ার কথা ছিল। বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পের কৃষকদের ধান উৎপাদনে খরচ লাগবে না। শুধু তারা জমির উৎপাদিত ফসল ঘরে নেবেন।
৫৪ কৃষক এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী। বরাদ্দ দেয়া হয় ১৩ লাখেরও বেশি টাকা। প্রকল্পে ৫০ একর অর্থাৎ ১৫০ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়। কিন্তু মাত্র ৬০-৭০ বিঘা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে চারা রোপণ ও কম্বাইনড হারভেস্টারের মাধ্যমে ৪ দিনে সর্বোচ্চ ৫০ বিঘা জমির ধান কেটে দেয়া হয়েছে।
কৃষকরা জানান, তারা এর আগে মিনিকেটসহ অন্যান্য ধান চাষ করতেন। বাজারে সেইসব ধানের ভালো দাম পেতেন। কোনো খরচ লাগবে না বলে অধিদপ্তরের লোকজন তাদের হাইব্রিড জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। ‘সমলয় চাষাবাদ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ধান উৎপাদনে তাদের কোন খরচ করা লাগবে না বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ খরচ তাদের বহন করতে হয়েছে।
কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, তিন বিঘা জমিতে চাষাবাদ করলেও প্রকল্প থেকে দুই বিঘা জমির সার-বীজ দেয়া হয়েছে। নিজ হাতে চারা রোপণ করেছি ও ধান হাতে কেটেছি। ৫ হাজার টাকার সার কীটনাশক কিনেছি।
কৃষক বিকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, ২২ কাঠা জমির সার-বীজ ছাড়া কিছুই পাইনি। মেশিনের সাহায্যে চারা রোপণ ও ধান কাটার কোন সুবিধা পাননি। সমলয় চাষাবাদ প্রকল্পে আমার ক্ষতি হয়েছে। কখনও আর এ প্রকল্পে চাষ করবো না।
কৃষক নিহার আলী বলেন, কৃষিকাজ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। দশ কাঠা জমিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ধানের চাষ করা হয়েছে। অর্ধেক জমির ধান মেশিনে কেটে দেয়া হয়েছে। আর অর্ধেক নিজ খরচে কেটেছি। আপেল উদ্দিন নামে আরেক চাষি বলেন, এর আগে ‘মিনিকেট’ জাতের ধান লাগাতাম। সে তুলনায় সমলয় প্রকল্পে ধানের ফলন কম হয়েছে। এর বাজার মূল্যও কম।
ঝিকরগাছা ফতেপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোকুনুজ্জামান বলেন, প্রতি একরে (৩ বিঘা) জমির ধান কাটতে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার টাকা। কিন্তু ভাড়া বেশি থাকায় সব ধান মেশিনে কাটা সম্ভব হয়নি। কৃষক যদি আমাদের পরামর্শ ছাড়াই ইচ্ছেমত অতিরিক্ত সার-কীটনাশক প্রয়োগ করে তার দায়ভার তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, বীজতলা তৈরি, ধান রোপণ ও কাটার প্রথম দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমি উপস্থিত ছিলাম। সব ক্ষেতের ধান কাটার সময় উপস্থিত ছিলাম না। কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।