ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ১ কোটি ১০ লাখ (১১ মিলিয়ন) অবৈধ অভিবাসীদের ‘এগ্রিকালচারাল ওর্য়াকার’ বা ‘কৃষি শ্রমিক’ হিসেবে বৈধ করার প্রস্তাব উঠেছে। সরকারি দল ডেমোক্র্যাট ও বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির ২ জন কংগ্রেসওম্যান তৈরি করেছেন একটি বাইপার্টিজান ইমিগ্রেশন বিল। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ দ্য ডিগনিটি অব ২০২৩’। এই বিলের উদ্যোক্তা হচ্ছেন টেক্সাস থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসওম্যান ভারোনিকা এসকোবার ও ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান মারিয়া এলভিরা সালাজার। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অবস্থানকারে অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের আবেদন ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে বলে উল্লেখ করেছেন। বিলটিকে অ্যামনেস্টি না বলে ইমিগ্রেশন রিফর্ম বিল হিসেবে বিবেচিত হবে। আগামী জুন নাগাদ বিলটি হাউজে আনুষ্ঠানিকভাবে উঠবে। সেখানে পাস হলে তা যাবে সিনেটে। কংগ্রেসর উভয় পক্ষই বিলটির ব্যাপারে ইতিবাচক কথাবার্তা বলছেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধ প্রবেশ এখন মহাদুর্যোগের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার অ্যাসাইলাম প্রার্থী বা মাইগ্রান্ট প্রবেশ করছে সীমান্ত পথে। দেশের দক্ষিন সীমান্তে বিরাজ করছে অস্থিরতা। প্রতিদিন শিশু মাইগ্রেন্টসহ অনেকেই মারা যাচ্ছে সীমান্তের ওপারে কিংবা ভেতরে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার হওয়ায় বিরাজ করছে মানবেতর পরিস্থিতি। বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে বর্ডার পরিস্থিতিতে তুলোধুনো করছে। বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি বাইডেন প্রশাসনও।
এটি একটি কমপ্রেহিনসিভ বিল আকারে তোলা হবে। ইমিগ্রেশন প্রশ্নে রিপাবলিকানদের কঠোর অবস্থান নমনীয় করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের অতি উদার নীতিরও কর্তন করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বিলটিতে। বিলটির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল উভয় আইলের কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেছেন, হতাশা ও বিভ্রান্তিতে ইমিগ্রেশন ইস্যু। যুক্তিসংগত ও নুন্যতম কমন গ্রাউন্ডে কংগ্রেসে একটি বাইপার্টিজান বিল আসছে। এটি হতে পারে অন্ধকারের আলোর দিশা।তা উভয় দলের সদস্যদের কাছে গ্রহনযোগ্য হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিলটিতে আমেরিকায় কাগজপত্রহীন বা অবৈধভাবে বসবাসরত ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের বৈধতা দানের বিষয়টি সংযোজত হচ্ছে। তাদেরকে ‘অ্যাগ্রিকালচারাল ওর্য়াকার’ বা ‘কৃষি শ্রমিক হিসেবে স্ট্যাটাস দেয়া হবে। পাশাপাশি সীমান্ত অতিক্রম করে এখন যারা আসছেন তাদের ব্যাপক স্ক্রুটনি ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের ব্যবস্থা থাকবে। ৪৫ দিনের মধ্যে এলিজিবিলিটি প্রমানিত না হলে থাকছে তাদের ডিপোর্ট করার বিধান। এছাড়া সীমান্তে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরির জন্য বিশাল অংকের বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে বিলটিতে।
বিলটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিল্ট দ্যা ওয়াল’ রাজনৈতিক ককপিট থেকে সরে এসে সীমান্ত নীরাপত্তার ওপর জোড় দেয়া হয়েছে। বিল্ট দ্যা ওয়াল না বলে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও জনবল বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এসাইলামের জন্য থাকছে নতুন পথ নির্দেশনা। ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিলটি পাস হলে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম বন্ধ হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কাগজপত্রহীনরা লিগ্যাল স্টাটাস, ওয়ার্ক পারমিট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাবেন।
বিলটিতে সীমান্তে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বির্নিমান এর পাশাপাশি টেকনোলজির, রিসার্স ও টাস্কফোর্স ডেভেলপমেন্টের কথা বলা হয়েছে। এসাইলাম প্রার্থী কিংবা লিগ্যালি মাইগ্র্যান্টে আগ্রহী প্রার্থীর প্রত্যেককে ৫ হাজার ডলার করে দিতে হবে। তবে তা ৭ বছরের কিস্তিতে প্রদান করা যাবে। ওয়ার্ক পারমিট পাবার সাথে সাথে ট্যাক্স প্রদান শুরু করতে হবে। ইউএস আর্মিতে যোগদানের আগ্রহ সম্বলিত একটি অপশন থাকবে আবেদনে। যা কিনা পরবর্তীতে নাগরিক্তব প্রাপ্তির পথকে সুগম করবে।
বিলটির আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে বর্ডার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও ইকুয়েপমেন্ট ডেভেলপমেন্ট, টেকনোলজির আধুনিকীকরন,অধিক সংখ্যক সিপিবি এজেন্ট ও অফিসার নিয়োগ, ইউএস সিটিজেনশীপ ও ইমিগ্রেশন সার্ভিসের অপারেশন-সাপোর্ট সার্ভিসের জন্য ২.৫৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের কনস্যুলার সার্ভিসের জন্য ৮৫২ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বাজেট।
এছাড়া ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে রিজিওনাল অফিস স্থাপন। সেখানেই এসাইলাম প্রার্থীর এলিজিবিলিটির প্রি-স্ক্রিনড সম্পন্ন হবে। যদি অ্যাসাইলাম পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হন তবে তাদের জন্য ‘হিউম্যানিটারিয়ান ভিসা’ ইস্যু করা হবে। এতে তারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে। সীমান্তে গিয়ে মাসের পর মাস প্রবেশের সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে না।