নিজস্ব পতিবেদক : প্রচলিত কথা কাষ্টমস জীবনে একবার, আয়কর বছরে একবার আর ভ্যাট প্রতি পায়ে একবার। একটি যন্ত্রপাতী আমদানী করলে কাষ্টমস থেকে খালাস করতে একবার ডিউটি দিতে হয়, সেটার ব্যবহারের ফলে যা আয় হবে সেটার আয়কর বছর ভিত্তিক হবে। আর ভ্যাট প্রতিদিনের প্রতিটা কাজের সাথে জড়িত। এ তিনটাই এনবিআরের অধীনে সরকারের রাজস্ব আয়ের খাত। প্রতিটা বিষয়ে আলাদা আলাদা আইন আছে। কাষ্টমস ও ট্যাক্স এর বয়স বেশী হলেও ভ্যাট আমাদের দেশে ১৯৯১ সালের জুলাই মাস থেকে কার্যকর।আইনের ব্যবহারের গুরুত্ব বিবেচনায় নিলে কাষ্টমস ও আয়কর ব্যবস্থাপনা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার থেকে অধিক গুরুত্ব বহন করে ভ্যাট ব্যবস্থাপনা। ব্যবসায়ের প্রতিটা কার্যক্রমের সাথে ও প্রতিবার হাতবদলের সাথে ভ্যাট সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ দ্রব্যের জীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট ও শেষ হবে না। দ্রব্যের জীবন সার্কেল শেষ হয় সেটার ব্যবহারের দ্বারা বা ভোক্তার ভোগের মাধ্যমে। তাহলে সহজে বলা যায় ভ্যাট প্রদানকারী ভোক্তা বা জনগন। দ্রব্যের জীবন সার্কেলের প্রতিটা হাত বদলের সাথে ভ্যাটের সম্পর্ক আছে তাই সেটা দ্রব্যমূল্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং সেটার সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত।
আসলে আমরা বিগত ৩০ বছরে ভ্যাট আইন পরিবর্তন ও ভ্যাটের বিভিন্ন হার নিয়ে অনেক মিছিল মিটিং করেছি। এনবিআর ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীক ফোরাম উভয় নিজেদের স্বার্থ নিয়ে সভা সেমিনার করেছেন শুধু ভ্যাট হার বাড়ানো বা কমানোর জন্য। এনবিআর ভ্যাটের হার বাড়ায়ে দিলে ব্যবসায়ীগন সমহারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দেন। সবাই সহজ সমাধানের পথে যাবেন সেটাই স্বাভাবিক। উভয়পক্ষের ফলাফল সমান হলেও এর দায় গিয়ে পরে শেষ পর্যন্ত ভোক্তার উপর। ভ্যাট হল দ্রব্যমূল্য চেইনের উপর বিশাল প্রভাব বিস্তারকারী একটা আইন তাই সেটার কম/বেশী হলে দ্রব্যমুল্য কম/বেশী হবে এবং সেটার ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। আসলে আমরা ভ্যাট ফাকির চিন্তা বেশী করি বলে সেটার ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নিয়ে ভাবার সময় পাই না। ভ্যাট ব্যবস্থাপনার দ্বারা আইন মেনে অধিক লাভজনকভাবে সুনামের সাথে এবং প্রতিযোগিতামূলকভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম কম রেখে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়, সেদিকে কেউ যেতে চাই না।
বাস্তবঘটনা-ঃ- একজন আমদানীকারক দ্রব্য আমদানী করার সময় ভ্যাট প্রদান করেন। তিনি যে সমস্ত কোম্পানীর নিকট সরবরাহ করেন সেখানে সরবরাহকারী হিসাবে উৎসে ভ্যাট কর্তন করে রাখেন। সার্কেল অফিসারের কথামত প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় ভ্যাট দেন। এই প্রতিটা স্তরের ভ্যাট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে সকল দায় গিয়ে পরে ভোক্তার উপর। এত ভ্যাট দেওয়ার পরও তিনি দায় মুক্ত নয়। কয়েক দিন আগে ভ্যাট কমিশনারেট থেকে ব্যাংক হিসাব বিবরনী এনে সমস্ত বিক্রয়ের উপর ব্যবসায় পর্যায়ে ৫% ভ্যাট দাবী করে। এতদিন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে পারলেও এখন দাবীকৃত ভ্যাটের টাকা তাকে পরিশোধ করতে হবে।এখন উনার বোধদয় হল যে আসলে উনাকে ভ্যাট জানতে হবে বা জানা লোক রাথতে হবে। যদি আমাদের একটা সঠিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনার গাইডলাইন থাকত তাহলে শুরু হতে তিনি সঠিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনার দ্বারা ৪-৫% হারে কম মূল্যে দ্রব্য বিক্রি করতে পারতেন এবং নিজে ও ভ্যাট নিয়ে বর্তমানের ঝামেলায় পরতেন না। উনি বিগত ৫ বছরে যে পরিমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছেন সেটার দায় কে নিবেন?
ভ্যাট আইন সঠিক ব্যবস্থাপনায় আসলে সরকারের একটা স্বচ্ছ ধারনা তৈরী হবে যে আসলে কি পরিমান ভ্যাট বর্তমান প্রেক্ষাপটে আদায় করা সম্ভব হবে এবং সেভাবে টার্গেট ঠিক করতে পারবেন। বিগত ত্রিশ বছরে এ ধারনা তো তৈরী হওয়ার কথা। ভ্যাট ব্যবস্থাপনা করতে হবে আমদানী/উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রতিটা হাতবদলের একটা পরিমান সংযোজন ধরে এবং এক হারে ও রেয়াতে/প্রদত্ত ভ্যাট সমন্বয় ব্যবস্থা রেখে সহজে বোঝা যাবে যে আর কত পরিমান ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হবে। আমরা ভ্যাট আইনের উৎসে ভ্যাট কর্তনের বাস্তবভিত্তিক ব্যবহার ও সেটার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সকল স্তরে প্রদত্ত ভ্যাট বা যে সকল পন্য বা সেবার সমন্বয়ে প্রদ্ত্ত সেবার ভ্যাটের সাথে প্রতিটা পন্য বা সেবার উপর প্রদত্ত ভ্যাটসমূহ বিবেচনায় নিয়ে সেগুলির সর্বোত্তম ব্যবহারের দ্বারা দ্রব্য মূল্য কমানো সম্ভব সেটার গাইডলাইন তৈরী করছি। আমাদের উদ্দেশ্য উভয় পক্ষের ন্যায্যতা বিধান করা।
মোঃ আলীমুজ্জামান, লিডকন্সালটেন্ট, দ্যা রিয়েলকন্সালটেসন,টিআরসিভ্যাটপ্রাকটিকালিমিটেড