বেনাপোল প্রতিনিধি : প্রচন্ড গরমে শহরসহ গ্রাম জুড়ে কদর বেড়েছে তালের শাঁসের। একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া রসালো এ ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়। কচি তালের শাঁস যেমন সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তেমনি পাঁকা তাল ও তালের পিঠা গ্রাম বাংলার সুস্বাদু ও জনপ্রিয় খাবার।
বাজারে নতুন ফল তাল শাঁস উঠতে শুরু করেছে। কাঁচা তালের কচি শাঁস খেতে কার না ভালো লাগে। যশোরের শার্শা, বেনাপোল, নাভারন, বাগআঁচড়া ও নিজামপুর বাজারসহ বিভিন্ন ছোট বড় বাজার কেন্দ্র ও প্রধান সড়কের আশেপাশে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি ও সিসহ নানা ধরনের পুষ্টির চাহিদাও মিটছে তালের শাঁসে। গ্রীষ্মের প্রচ- গরমে কঁচি তালের রসালো শাঁস সবাইকে তৃপ্তি দেয়। এ ছাড়া, এটি পুষ্টিকর, প্রশান্তিদায়ক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গ্রীষ্মকালে তাল পাখার বাতাস গ্রামের গরিব মানুষের শরীরে যেমন হিমেল পরশ বুলিয়ে দেয়, তেমনি ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাড়িঘর ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি মৌসুমি ফল হিসেবে তালের শাঁস অবদান রাখছে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও।
তালের শাঁসের ক্রেতা সামসু উদ্দিন জানান, তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাঁস খেতে ভালই লাগে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে’ কবিগুরুর সেই কবিতার মতো সারি সারি তালগাছ রাস্তার দু‘ধারে এখন আর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আবাসন গড়ার ধাক্কায় শার্শার গ্রাম এলাকার তালগাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরিবারের সবার জন্য তালের শাঁস কিনেছিলেন নিজামপুর এলাকার বাসিন্দা আবু মুছা। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া কোনও ফল পাওয়া মুশকিল। সেখানে তালের শাঁস সর্বোৎকৃষ্ট। কোনও ধরনের ভেজাল নেই। তবে তালের শাঁস সুপারশপে বিক্রি হয় না, এটা কেবল ফুটপাত বা মহল্লার অলিগলিতে পাওয়া যায়। ছোট শাঁস অনুযায়ী দাম কিছুটা বেশি হলেও এ নিয়ে কিছু বলার নেই।
তালের শাঁসের খুচরা বিক্রেতা মুজিবুর জানান, গত এক যুগের বেশি তালের শাঁস বিক্রি করেন। আগে এক-দুই টাকায় তালের শাঁস বিক্রি করলেও এখন ৫-১৫ টা প্রতি পিস বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক তিন-চারশ’ টাকা লাভ থাকে। গরম যতো বাড়ে তালের শাঁসের চাহিদাও বাড়ে। গাছ থেকে তালের কাঁদি কেটে তা আবার নামানো, বাজারে বয়ে আনা, তারপর কাটাকুটি করে তবেই ক্রেতার হাতে দিতে হয়। কষ্ট হলেও বেশ লাভ হয়।
তাল বিক্রেতা কামরুল বলেন, গরমের সময় ডাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তালশাঁস বিক্রি হয়। কিন্তু এখন তাল গাছ কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের দিতে পারছি না। গত বছরে করোনার প্রভাবে কাস্টমার কম থাকায় তাল বেশি ক্রয় করতে পারিনি। এবারে একটু লোকজন বাজারে আসতে পারছে বিক্রি ভাল হচ্ছে।
উপজেলার নিজামপুর বাজারে তালের শাঁস বিক্রেতা লিয়াকত আলী জানান, প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ কাঁদি (ছড়া) তাল বিক্রি হয়। তালের মৌসুম এলে এ এলাকার তিনিই শুধু তাল বিক্রি করেন। কেউ একটু তরল, আবার কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। যদিও এতে অনেক শ্রম দিতে হয়।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, তীব্র গরমে শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে তালের শাঁস। তালের আশে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম আঁশ রয়েছে। গরমে শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭.৫ ভাগ জলীয় অংশ। ০.৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। অবাক করার মতো খাদ্যশক্তি রয়েছে তালের শাঁসে। প্রায় ৮৭ কিলো ক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে তালের শাঁস নানা রোগের প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে।