অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। করোনার পর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চলা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করছে ব্যাংকিং খাত। ফলে আমানত বাড়ছে কিন্তু সে তুলনায় ঋণ বিতরণ কমেছে বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন।
সোমবার (২২ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অফিসে এবিবি আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর আউটলুক-২০২৩’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, করোনার পর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চলা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করছে ব্যাংকিং খাত। ফলে আমানত বাড়ছে কিন্তু সে তুলনায় কমেছে ঋণ বিতরণ। এ কারণে বর্তমানে প্রয়োজনের চেয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।
তিনি বলেন, এখনো আমাদের এলসি খোলার সমস্যা কাটেনি। ছোট ছোট এলসিগুলো খুলতে পারছি না। আমাদের কাছে ১০টি এলে হয়তো ৪টি এলসি খুলতে পারছি। আমরা গুরুত্ববহ পণ্য আমদানির জন্য এলসি ওপেন করছি। আমাদের আগে খেলনা আমদানির প্রয়োজন নেই, কারণ আমাদের সার দরকার, তেল দরকার। তবে আমাদের ভালো দিক হলো এক্সপোর্ট বাড়ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বেড়েছে। এখন আমানত ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। রেমিট্যান্সে ডলারের দাম ৮৭ টাকা থেকে ১০৮ টাকা হয়েছে। আমাদের তারল্য সাময়িক সংকট দেখা দিয়েছিল তবে এখন অতিরিক্ত তরল্য রয়েছে। পুরো ব্যাংকখাতে এখন অতিরিক্ত এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা তারল্য রয়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এবিবির চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন, এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আগামী জুলাই থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একক দাম চালু হতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সুদের হার বাজারভিত্তিক হওয়া কতটুকু প্রয়োজন তা নিয়ে চিন্তা করা উচিত। সুদহার বেধে দেওয়া হয়েছিল ৬ ও ৯ শতাংশ, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। এখন আসছে মুদ্রানীতিতে যদি সুদহারে ক্যাপ তুলে দেওয়া হয় তারপরও তা বাজারভিত্তিক হবে না বলে মনে করে এবিবি। তবে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের ব্যাংক খাত গত তুলনায় স্বস্তিতে ফিরেছে। এখন ২ কিংবা ১টা ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকে ডেফার পেমেন্ট বাকি নেই। তবে ২০১৮ বা ২০১৯ সালের মতো অবস্থায় আসতে এখনও বেশ সময় লাগবে। ২০২২ সালে বহির্বিশ্বের কারণে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা, সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ এবং রিজার্ভের যে সংকট গেছে তা গত ৩৫ বছর দেখেনি দেশের ব্যাংক খাত। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে ভয়াবহ মন্দায় পড়ে দেশ। একবছরেই টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশ। ডলার সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি শুরু করায় মূলত তারল্য সংকট দেখা দেয়।
রেমিট্যান্সের বিষয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, রেমিট্যান্সের ডলারের শুধু দাম নির্ধারণ করলেই হবে না রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কি ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাও দেখতে হবে। প্রবাসীরা এয়ারপোর্টে ভালো সুবিধা পান না, তাদের কোনো ধরনের কাজ সম্পর্কে শেখানো হয় না। অন্যান্য দেশে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয়,দক্ষ করা হয়। যা আমাদের দেওয়া হয় না। এতে প্রবাসীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছে।
এছাড়া খেলাপি ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, সংকটের মধ্যেও কোনো ব্যাংকের আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারেনি এমন হয়নি। তারল্য ব্যাংক খাতের কোনো চ্যালেঞ্জ না। দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না।