December 24, 2024 - 7:10 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeনির্বাচিত কলামভ্যাট আইন-২০১২ ও আমি ডাক্তার কদম আলী, ডিগ্রী নাই !

ভ্যাট আইন-২০১২ ও আমি ডাক্তার কদম আলী, ডিগ্রী নাই !

spot_img

মোঃ আলীমুজ্জামান; হেডিং এর শেষ অংশ আগে বলি, একটা বাংলা সিনেমায় এটিএম সামসুজ্জামান এর ডায়ালগ ছিল এটা। উনি রাস্তায় হকারী করে ঔষুধ বিক্রি করতেন। সেই ঔষুধ সম্পর্কে উনি বলতেন আমি ডাক্তার কদম আলী, ডিগ্রী নাই, আটার গুড়া রোদে শুকিয়ে ঔষুধ তৈরী করি যা খেলে কারো কোন ক্ষতি হয় না, কেউ মন থেকে বিশ্বাস করে খেলে তার অসুখ সেড়ে যায়। আমি নিজেকে সেরকম একজন মনে করি। আমার কোন পেশাগত সনদ নাই কিন্তু কথা বলি অনেক বড় বড় বিষয় নিয়ে এবং কাজ করার সুযোগ হয় অন্যরা যেখানে শেষ করেন। ভ্যাট আইন আর দশটা প্রচলিত আইনের মত রস কস হীন ভাষায় লেখা বিষয় যা নিয়ে কথা বলতে হলে সেটার সুর, তাল ও ল জানা ব্যারিষ্টার না হলেও নূণ্যতম এলএলবি ডিগ্রী থাকা দরকার। অন্য দিকে একাউন্টিং নিয়ে কথা বলতে হলে এফসিএ না হলেও নূন্যতম এসিএমএ হওয়া জরুরী। বাস্তবতা হল এই উভয় বিষয়ের কোন ডিগ্রী আমার নাই। এখন আমি ভ্যাট আইন ও হিসাব ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা ও সহজ কিছু বিষয় শুধুমাত্র কঠিন শব্দ ব্যবহার করে আইনকে জটিল করা হয় সেটা নিয়ে। যা আমার জন্য নেহাতী বেমানান বলে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজের সম্পর্কে বলে নিলাম। এর চেয়ে ভাল কোন উপমা নিজের সম্পর্কে খুজে পাই নাই। তবে শুকরিয়া আল্লাহর নিকট এই উভয় পেশার সকল বিবেচনায় সেরা দুই জন ভাল মানুষ আমাকে সাহস যোগান এ ধরনের লিখতে। উনাদের মত আরো হাজার মানুষের অনুপেনায় আল্লাহ আজগের এই অবস্থানে এনেছেন।

আমার মতে ভ্যাট আইন টাকা আদান প্রদানের সাথে জড়িত বিধায় এটা সব দিক থেকে পরিপূর্ণ হিসাব ব্যবস্থার আওতার একটা আইন ই সিষ্টেম। যার জন্য এত ব্যথ্যা বিশ্লেষন বা আলাদা মূসক ফরম সমূহের দরকার আছে বলে মনে হয় না। ভ্যাট আইনে অত টুকু লেখার দরকার যত টুকু ভ্যাট প্রদান ও রেয়াত গ্রহন সংক্রান্ত যা আইএএস (ইন্টারন্যাশনাল একাউন্টিং সান্ডার্ড) বা বিএএস (বাংলাদেশ একাউন্টিং সান্ডার্ড) বলা নাই। কোথায় কি ধরণের পন্য/কাচামাল ক্রয়ের উপর প্রদত্ত ভ্যাট বা কি ধরনের সেবার উপর প্রদত্ত ভ্যাট রেয়াত গ্রহন করা
যাবে এবং কোথায় কি ধরণের পণ্য বিক্রয় করলে কি পরিমান ভ্যাট প্রদান করতে হবে সেটার নির্দেশনা বলা ও এই দুই এর পার্থক্য নীট প্রদেয় হলে বিভাবে প্রদান করা যাবে বা নীট প্রদেয় নেগেটিভ হলে সেটার পরিনাম ই বা কি হবে যা আইনে সহজ ভাষায় বলা থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ীর কাছে সরকারের দরকার শুধুমাত্র ন্যায়্য ভ্যাট আদায় এর নিশ্চয়তা বিধানের আইন তৈরী করা। ব্যবসায়ীর হাড়ির খবর জানার আইন তৈরী করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। জাতি হিসাবে বাংগালীরা খুবই লজ্জাশীল ও আবেগ প্রবন। যে কোন পরিস্থতিতে না খেয়ে দুইদিন পার করতে পারব কিন্ত হাত পেতে সাহায্য চাইব না, আর ফাসি দিয়ে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করলেও ঘরের কথা পরে জানবে না। এই জাতির কাছে ভ্যাট কর্মকর্তা যে কোন সময় ব্যবসায়ীর ব্যবসায় স্থল ছাড়ও গাড়ী  বাড়ীতে প্রবেশ এর বিধান রাখলে সেই জাতির ভ্যাট অফিস থেকে দূরে থাকার চাইতে সহজ সমাধান আর জানা নাই।

একটা ছেলে পরীক্ষায় মূখস্ত করেছে নদীর রচনা কিন্ত প্রশ্ন পত্রে এসেছে গরুর রচনা। বাসা থেকে মা বলে দিয়েছেন কোন প্রশ্নের উত্তর যেন বাদ না যায়। তাই কি আর করা। ছেলেটার মনে হল কোন মত গরুকে রাজি করে নদীতে গোষল করাতে নিতে পারলে শুরু করা যাবে নদীর রচনা লেখা। গল্পে ছেলেটার প্রথমে বোকা বলা উচিত ছিল কিন্ত আমি সেটা বলি নাই কারণ এটা একটা ক্রিয়েটিভ ক্ষমতা বলে মনে হয়েছে। গল্পের ছেলেটার মত আমার ধারণা ভ্যাট আইনে উপরে বর্ণিত বিষয়াদির সাথে দরকারী আরো কিছু সঠিক নিয়মে এনে একাউন্টিং সিষ্টেম এর সাথে সমন্বয় করা। এতে করে একদিকে আইনের প্রয়োগ সহজ হবে অন্য দক্ষ জনশক্তির বহুবিধ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। ভ্যাট আইনে সঠিক ভাবে ভ্যাট প্রদান না করলে যে সমস্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তাতে আমার মনে হয়েছে বাংগালীকে হাই কোর্টের ভয় দেখানোর মত। একজন ব্যবসায়ীকে কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে বা একটা ট্রাক ধরে জাতীয় পত্রিকায় হেড লাইন করে তার সম্মানহানীকর অবস্থানে নিলে উনার হারানোর আর কিছু থাকে না। ভ্যাট আইনে বাংলা ভাষার ব্যবহারের কথা যদি বলি কোথায় ও কোথায়ও এমন বাংলা শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে যা আমার মত কদম আলীরা বিশ বছর ভ্যাট আইন নিয়ে কাজ করার পর ও সঠিক অর্থ বুঝতে পারি না। যেমন হ্রাসকারী সমন্বয় ও বৃদ্ধিকারী সমন্বয় বা ডেবিট নোট ও ক্রেডিট নোট বা এ সংক্রান্ত আরো অনেক বিষয় বিভিন্ন
জায়গায় বিভিন্ন বাংলা শব্দের ঝলকানী সহ বলা হয়েছে। আবার এ গুলির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যে উপস্থাপন দেওয়া হয়েছে তাতে আগের টা পড়ে পরবর্তীটা পড়তে গেলে আগের পড়ার সাথে তালগোল পাকিয়ে যায়। আমার মতে এই হাজার শব্দের অর্থ স্রেফ দুইটা এক- অগ্রীম পদত্ত ভ্যাট এবং দুই – প্রদেয় ভ্যাট যার ইংরেজি ভাষায় অউঠঅঘঈঊ ঠঅঞ অন্যটা ঠঅঞ চঅণঅইখঊ। এই বাক্যগুলি হিসাবের ভাষায় নিলে একটা সম্পদ ও অন্যটা দায়। প্রতিটা সম্পদ ও দায়ের বিপরীতে থাকে দুটি পক্ষ একজন দাতা আর অন্যজন গ্রহিতা অর্থাৎ একটা ডেবিট
অন্যটা ক্রেডিট। এখন যদি ভ্যাট রেয়াত, পণ্য ফেরত এর ভ্যাট সমন্বয়, ভূলে মূসক চালান ৬.৩ এ বেশী প্রদত্ত ভ্যাট সমূহ ডেবিট হিসাবে বলা যায় আর অন্য দিকে বিক্রয়ের সময় প্রদেয় ভ্যাট, রেয়াত বাতীল, মূসক চালান ৬.৩ এ কম প্রদত্ত মূসক সমূহকে ক্রেডিট নামে ডাকা যায় তাহলে ভ্যাট আইন বুঝতে ও ব্যবহারে সহজ হবে। আর এই দুই জায়গার উপর নির্ভর করবে ভ্যাট আইনের সঠিক প্রয়োগ। এই বিষয়ের উপর পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত ধারাবাহিক ভাবে লেখার আশা রেখে এখন ভ্যাট আইনের এ ধরনের জটিলতা ও ব্যবসায়ীদের আইন  মানার মানসিকতার উপর একটা গল্প বলে শেষ করতে চাই। কোন এক গ্রামের রাস্তা দিয়ে চাচা ও ভাতিজা হেটে যাওয়ার সময় পাস থেকে চাচার পরিচিত একজন ডেকে জানতে চাইলেন ভাই আপনার সাথের ছেলেটা কে? চাচা লোকটাকে উত্তরে বলে দিলেন সাথের ছেলেটা উনার সালা। কথাটা বলার সাথে সাথে ভাতিজা চাচার কাছে এভাবে উত্তর দেওয়ার কারণ জানতে চাইলেন। তখন চাচা ভাতিজাকে বোঝাতে চাইলেন এই উত্তরে আমাদের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন হয় নাই কিন্তধর উনাকে যদি তোকে আমার ভাতিজা বলতাম তাহলে লোকটা জানতে চাইত কোন ভাইয়ের ছেলে, কত নম্বর ছেলে, ওর বাবা এখন কোথায় থাকে এ রকম শত প্রশ্নকরতেন আর আমি যদি সেগুলোর উত্তর না দিতাম তাহলে উনার অসম্মান হত।

আমাদের দেশের ভ্যাট আইনের অবস্থা ঠিক এই গল্পের মত, ব্যবসায়ীরা যদি ভ্যাট অফিসারের সালা হয়ে পারিবারিক ব্যবসায়ের লাভের কিছুঅংশ দুলাভাইয়ের মাধ্যমে বোনকে প্রদানের মত সহজ সমাধানের পথে না হেটে প্রকৃত সত্য অর্থাৎ সঠিক ভ্যাট আইন মানতে যান তাহলে এক মূসক ফরম ৯.১ পূরণ এর তথ্যের জন্য ৬৪ টি সাব ফরম পূরণের তথ্য সংরক্ষন করতে হবে। এখন ব্যবসায়ীদের অবস্থা এমন যদি ভ্যাট অফিসার বলেন ব্যাটা তোকে এখন ই বেধে নিয়ে যাব। ব্যবসায়ী কিছুটা সাহস সংগ্রহ করে বললেন আমার কি পা নাই? এবার ভ্যাট অফিসার রেগে বলেন কি তুই আমাকে লাথি দিবি? তখন ব্যবসায়ী নরম গলায় বলবেন না স্যার আমি পা দিয়ে ব্যবসা ফেলে দোড় এ পালাতে চাইছি।

লেখক- লিড কন্সালটেন্ট (ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাষ্টমস), দ্যা রিয়েল কন্সালটেসন 
ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক/জিএম (ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাষ্টমস), ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

এসকে ট্রিমসের ক্যাটাগরি পরিবর্তন

পুঁজিবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র...

একমি ল্যাবরেটরিজের ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন

পুঁজিবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিঃ এর ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। সভায়...

খাইতে খাইতে শেখ মুজিবরেও খেয়ে ফেলেছে: বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, স্বাধীনতার পরে পল্টন ময়দানে মওলানা ভাষানী শেখ মুজিবুর রহমানকে...

দেশব্যাপী গ্রাহক সেবা সপ্তাহ-২০২৪ শুরু করলো ওয়ালটন কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট

কর্পোরেট ডেস্ক: ‘সেবার প্রত্যয়ে আমরাই এগিয়ে’ এই স্লোগানে দেশব্যাপী ‘গ্রাহক সেবা সপ্তাহ- ২০২৪’ কর্মসূচী শুরু করেছে দেশের টেক জায়ান্ট ওয়ালটনের কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট (সিএসএম)।...

‘ঐতিহ্য’-এর নতুন উদ্যোগ: ‘বিনামূল্যে বই নিন, বই পড়ে ফেরত দিন’

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: প্রকাশনা সংস্থা 'ঐতিহ্য' দীর্ঘদিন ধরে পাঠকদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়তে এবং সাহিত্যের চর্চাকে উৎসাহিত করতে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।...

চুয়াডাঙ্গায় আনসার-ভিডিপি সদস্যের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় আনসার ও ভিডিপির সদস্যদের মধ্যে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সদর উপজেলার আলুকদিয়া...

সাবেক এমপি হেনরী ও তার স্বামীর ব্যাংক হিসাবে ২৩০০ কোটি টাকার লেনদেন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রায় ৭৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদারের নামে...

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে ঢাকার চিঠি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের কাছে একটি কূটনৈতিক চিঠি পাঠিয়েছে...