September 20, 2024 - 5:35 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসব্যাংক খাতে যোগ্য লোক গড়ে তুলতে পারিনি: আনিস এ খান

ব্যাংক খাতে যোগ্য লোক গড়ে তুলতে পারিনি: আনিস এ খান

spot_img

আনিস এ খান। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য, আমানতের নিম্নমুখী সুদ হারসহ ব্যাংকিং ব্যবস্থার নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। ব্যাংকে টাকা রেখে কেন আমানতকারীরা প্রকৃত অর্থে কোনো লাভ পাচ্ছেন না, তারও একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন: ব্যাংকে আমানত রেখে আমানতকারীরা এখন মূলত কোনো মুনাফাই পাচ্ছেন না? এর কারণ কী?

আনিস এ খান: এ বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে দেখতে হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা আগে কী ছিল আর এখন কী হয়েছে। আগে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ থেকে ১১ শতাংশের মতো। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা যদি ইউরোপের দিকে দেখি সেখানে সুদ হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। জাপানেও সুদ হার শূন্যের কোঠায়। অন্যদিকে দেশে আগের চেয়ে শিল্পকারখানা, বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। উৎপাদনও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ কারণে প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। এ রকম পরিস্থিতিতে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা মুশকিল। তাই ব্যবসায়ীদের চাপে সুদ হার কমাতে শুরু করে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া আগে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সরকার মোটা অঙ্কের ঋণ নিত। সেটিও এখন কমে গেছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। ফলে ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য তৈরি হয়েছে। এতে করে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে আমানতের সুদও কমে গেছে।

প্রশ্ন: তাহলে আমানতকারীরা কোথায় টাকা রাখবেন?

আনিস এ খান: আমানতকারীদের মনে রাখতে হবে ব্যাংক কখনো সাধারণ মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস হতে পারে না। ব্যাংক শুধু আর্থিক খাতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষের বাড়তি আয়ের জন্য আমাদের দেশে আর্থিক পণ্যের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাই আমি মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব কিছু ডেরিভেটিভস পণ্য চালু করা উচিত। যেখানে সাধারণ মানুষ কিছু টাকা রাখার সুযোগ পাবেন। আমি মনে করি, সাধারণ মানুষের জমানো অর্থ কখনো একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা উচিত না। কিছু টাকা ব্যাংকে রাখবে, কিছু টাকা ডেরিভেটিভসে, কিছু টাকা শেয়ারবাজারে, আবার কিছু সঞ্চয়পত্রে রেখে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এতে করে আমানতকারীর ঝুঁকিও কমে যায়।

প্রশ্ন: কিন্তু আমাদের দেশে শেয়ারবাজারসহ অন্যান্য আর্থিক পণ্যের ওপর তো সাধারণ মানুষ খুব একটা আস্থাশীল না। অনেকের তেমন কোনো ধারণাও নেই।

আনিস এ খান: হ্যাঁ, এটা ঠিক। আর্থিক অনেক পণ্যের সঙ্গে এ দেশের সাধারণ মানুষ খুব বেশি পরিচিত না। তবে আমি মনে করি আগে-পরে আমাদের ব্যাংকের বাইরে বিকল্প অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে যেতে হবে। এ দেশে ১৬ কোটি মানুষের সিংহভাগকে এখনো আমরা বিমার আওতায় আনতে পারিনি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি অনেক বিমা কোম্পানি ব্যবসা করছে। তা সত্ত্বেও বিমার হার অত্যন্ত নগণ্য। আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংক-ইনস্যুরেন্স সেবাটি চালু করা দরকার। এ সেবাটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সাধারণ মানুষ তার সাধ্য অনুযায়ী মাসে মাসে কিছু টাকা জমা করবেন, যা দিয়ে জীবনবিমার কাভারেজ দেওয়া হবে। ব্যাংকের সঙ্গে মিলেই এ সেবাটি দ্রুততম সময়ে চালু করা দরকার। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আমরা সেখানে বিমা খাতে অনেক ধরনের সেবা পণ্য দেখতে পাই, যেখানে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ টাকা লগ্নি করছে।

প্রশ্ন: দেশে বিনিয়োগে একধরনের ​স্থবিরতা বিরাজ করছে। এতে ঋণ চাহিদা কম থাকায় ব্যাংকে তারল্য বাড়ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ভালো থাকার পরও বিনিয়োগ হচ্ছে না কেন?

আনিস এ খান: আয়তনে বাংলাদেশ ছোট দেশ। লোকসংখ্যা ১৬ কোটি। ছোট দেশ হওয়ায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধা আছে। কিন্তু আমরা দেখছি শিল্পের উন্নয়নের কারণে বিভিন্ন খাতে অনেকগুলো মিল-কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে জোগান বেড়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে দেশে অনেকগুলো হোটেল হয়েছে। এখন সেখানে লোকজন না থাকলে ব্যবসায়িকভাবে তা সফল হবে না। সিমেন্ট, ইস্পাতসহ অনেক খাতে একই অবস্থা। এতে করে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে একধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে নতুন করে কেউ বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। এর বাইরে অবকাঠামো সুবিধার অভাব তো রয়েছেই। তবে আমি মনে করি সরকার যেসব অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে দেশে চাহিদা বাড়বে। তখন ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রশ্ন: অনেকেই বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক বেশি। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে সুদ হারের ওপর।

আনিস এ খান: বাংলাদেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫৭টি ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলো চালাতে হলে ৫৭ জন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও লাগবে। ৫৭ জন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), ৫৭ জন প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা লাগবে। একইভাবে অন্যান্য কিছু পদেও প্রয়োজনীয় লোক লাগবে। এতসংখ্যক যোগ্য লোক পাওয়া কিছুটা মুশকিলের বিষয়। খুব দ্রুততার সঙ্গে আমাদের দেশে ব্যাংক খাতের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সেই হারে যোগ্য লোক গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে যোগ্য লোক নিতে গেলে তাকে বাড়তি বেতন-ভাতা দিতে হয়। এতে ব্যবস্থাপনা খরচও বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের চালিকাশক্তি হলো পেশাদার কিছু লোক। তাই দক্ষ ও যোগ্য লোক পেতে এ খাতে চাইলেও খরচ কমানো সম্ভব নয়। আবার ব্যাংক যেসব স্থানে শাখা খোলে, সেখানে জায়গার ভাড়াও ঊর্ধ্বমুখী। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এসব কারণে ব্যবস্থাপনা খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: আমাদের দেশে এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন?

আনিস এ খান: দেখুন, ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমার পক্ষে মন্তব্য করা কঠিন। তবে একজন পেশাদার ব্যাংকার হিসেবে শুধু এটুকু বলতে পারি আমাদের দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। প্রায় সব ব্যাংকে মূলধন প্রয়োজনের তুলনায় কম। ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়িত হলে মূলধন আরও বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে হয়তো ভবিষ্যতে একীভূতকরণের বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ