বর্তমানে দেশজুড়ে আলোচিত দুইটি নাম সোহেল রানা এবং নুসরাত জাহান রাফি। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ফায়ারম্যান সোহেল রানা গত ২৮শে মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটকেপড়া মানুষদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই চলে যান না ফেরার দেশে। চিকিৎসার ব্যবস্থার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে চির বিদায় নিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে রইলেন জাতীয় বীর হিসেবে। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তিনি। মানুষের জন্য এমন আত্মত্যাগের কারণেই ইতিহাস তাঁকে অমরত্ম দিবে বলেই বিশ্বাস।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমন দরদী মানুষের বেঁচে ওঠার জন্য যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষ যখন প্রার্থনারত; তখনই নরাধম, পশুতুল্য পাপিষ্ঠরা দেখালো মানবতাকে কীভাবে ভুলুণ্ঠিত করা যায়। দিনে দুপুরে ফেনীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে আগুনে ঝলসে দিলো মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে আছে জীবন-মৃত্যুর সন্দিক্ষণে। গোটা দেশবাসী উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় প্রার্থনা করছেন তার জন্য। প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমান শারীরিক অবস্থা সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রতিকুলে।
আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে মানবতার সংজ্ঞা একদিকে যেমন উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেয়, অন্যদিকে আবার অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে যায় মানবতার সত্যিকারের অর্থ। শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশে হঠাৎ করে এমন সব ঘটনা ঘটে যাতে নাড়া পড়ে যায় মানবতার। নিকট অতীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। আইনের অধীনে বিচার হয়েছে এবং এখনো অনেক ঘটনার বিচার প্রক্রিয়াধীন আছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অন্যায়কারীরা ন্যায় ভুলে অন্যায় কাজে প্রলুব্ধ হয় বলে অনেকেই মনে করেন।
সারা জাগানো এসব অপকর্মকে চিরতরে বন্ধ করতে প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এবং সেটি হতে হবে দ্রুততার সাথে। এছাড়া রাষ্ট্রের সাথে সাথে আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এসকল অন্যায়, অপকর্ম তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কাজ বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে। মুষ্ঠিমেয় কয়েকজনের জন্য দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হোক, তা অবশ্যই কাম্য নয়।
সোহেল এবং নুসরাতের চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা অবশ্যই প্রসংশনীয়। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সোহেল। তাঁর চলে যাওয়ায় পরিবারটি পড়েছে দারুণ দুঃশ্চিন্তায়। সোহেলের অবদানের কথা মাথায় রেখে তাঁর পরিবারের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। যাতে করে তার ছোট ভাই বোনদের লেখাপড়ার বিঘ্ন না ঘটে, আর ক্ষুধার যন্ত্রণা বুঝতে না পারে সোহেলের পিতা-মাতা। স্রষ্টার কাছে কোনো কাজই কঠিন না। প্রার্থনা করি, নুসরাতকে জীবন দান করুন। ফিরিয়ে দিন মা-বাবা কোলে। আর সেই সাথে দাবি জানাচ্ছি, যারা এই কাজটি করেছে, ঠাণ্ডা মাথা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তার দেহে, সেই সব অপরাধীদের দ্রুততার সাথে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক, দেয়া হোক কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি। যাতে করে ভবিষ্যতে আর যেন কাউকে নুসরাতের ভাগ্য বরণ করতে না হয়।
আরো পড়ুন: রাজউক থেকে ভবনে বসবাসের উপযোগী সনদ প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক