রাজধানী ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লেগে মারা গেছেন ২৬জন। চারজন দমকল কর্মীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৭৪জন। এফ আর টাওয়ার ভবনটি পরিদর্শনের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা আগুন দ্রুত ছড়ানোর জন্য ৬টি কারণ নির্দিষ্ট করেছেন। কারণগুলো হলো, ১. প্রশিক্ষিত লোকজন না থাকা, ২. ‘ফায়ার ডোর না থাকা, ৩. মূল সিঁড়ি ও আগুন এক্সিট সিঁড়ি পাশাপাশি হওয়া, ৪. এক্সটিংগুইশার থাকলেও ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত লোক না থাকা, ৫. হোসপাইপে পানির সংযোগ না থাকা এবং ৬. ফায়ার অ্যালার্ম না থাকা। প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, এতগুলো ত্রুটি নিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এমন একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ হলো কীভাবে? আর হয়ে থাকলেও তা কেউ জানলো কেন?
আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী এবং বিশেষজ্ঞদের বুদ্ধি খোলে কোনো দুঘর্টনা ঘটার এবং প্রাণহানির পর। এফআর টাওয়ারের মতো এমন বহুতল অসংখ্য ভবন রয়েছে রাজধানীতে। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা সহ নানা ত্রুটি এখনো রয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞের অভিমত। কারণ, অতিলোভ এবং মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার জন্যই জীবন রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না রেখেই ভবন নির্মাণ করা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এই অনৈতিক অপকর্মকে অর্থের মাধ্যমে সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত ও অসাধু কর্মকর্তা। ফলে, অগ্নি সংযোগের ঘটনা এবং এর ফলে হতাহতে সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজউক জানিয়েছে, ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে এই ভবনটি ২২তলা নির্মিত হয়েছিল। সেটা যদি হয়, তাহলে ভবন নির্মাণের পর রাজউক তা ভেঙে দিলো না কেন? কেনই বা তারা আইন বহির্ভূতভাবে গড়ে তোলা অতিরিক্ত তলা নির্মাণে বাধা দিলো না।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন, কোন ভবন পরিকল্পনার বাইরে করা হয়েছে, নকশা, অনুমোদন ও বিল্ডিং কোড মানা হয়নি- এমন হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজউকের ২৪টি টিম মাঠে নামছে। মন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হলেও নগরবাসীর শঙ্কা দূর হচ্ছে না। কারণ, যাঁরা এর তদারকি করেন তাদের মধ্যেই থাকে অনেক অসাধু ব্যক্তি। ভবন মালিকের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং অন্যায় ও ভুলকে ন্যায় ও শুদ্ধ’র সার্টিফিকেট দেয়। এমনটা হলে কাজের কাজ কিছু হবে না, বন্ধ হবে না অগ্নিকাণ্ড এবং হতাহতের ঘটনা।
অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানিরোধে ভবন মালিকরা রাজউক থেকে অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণের পাশাপাশি ভবন নির্মাণের পর রাজউক থেকে আবারো বসবাসের অনুমতি সম্বলিত সার্টিফিকেট প্রদানে ব্যবস্থা করতে পারে। এবং এই কাজে অবশ্যই সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে করে কেউ ত্রুটিপূর্ণ ভবনে বসবাস করতে না পারে। এছাড়া যে সকল ব্যক্তি এই অনৈতিকতার সাথে সম্পৃক্ত থাকবে তাদের অবশ্যই কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই হয়তবা বন্ধ হতে পারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং অকাল প্রাণহানি।
আরও পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনারোধে কমিটি হয়, সুপারিশ হয়, বাস্তবায়ন নিয়ে থাকে সংশয়