বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া এলাকার বেকারিগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরিকৃত খাবার বাইরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এর সাথে মাসোহারা চুক্তিতে এ ব্যবসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও এসব প্রতিষ্ঠানে কোন অভিযান পরিচালনা করা হয় না। যার ফলে তারা বুক ফুলিয়ে এসব বেকারিতে চালাছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য তৈরি। বিএসটিআই এর নেই কোন ছাড়পত্র। সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে নানা ভাবে হুমকি প্রদর্শন করে থাকে এসব বেকারি মালিকরা।
উপজেলার বাগআঁচড়া বাজারে মেসার্স সততা বেকারি, জামতলার বাজারের মেহেনাজ বেকারি, গোগা কলেজ রোড অবস্থিত মোহনা ফুড বেকারিতে নিয়ম না মেনে অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করছে এসব পণ্য। খাদ্য তৈরী করার পাত্রগুলো অপরিষ্কার। যার মধ্যে মাছিসহ বিভিন্ন পোকামাকড় লক্ষ্য করা গেছে। কারখানার ভেতরে যেখানে তৈরী খাবার রাখা আছে সেখানেই নোংরা পরিবেশ, রয়েছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক স্যাকারিন, কেমিক্যাল এবং একাধিক পাম ওয়েরের ড্রাম। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরী পণ্য। উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীন তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। বিএসটিআই এর কোনো অনুমোদন নেই এইসব প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেখা মেলেনি। কখনো এসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হয়নি। প্রতিদিন বেপোরোয়া গতিতে চালাচ্ছে তাদের পণ্য উৎপাদন। অনুমোদনহীন খাবারের সঙ্গে বেকিং পাউডার, ইষ্ট, স্যাকারিন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়।
এসব বেকারীর উৎপাদিত বেকারি সামগ্রী পাউরুটিসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর মোড়কে বিএসটিআই, বিডিএস নম্বর লেখা নেই। মোড়কের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীণ তারিখ লেখা নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরী করা এসব খাবার সামগ্রী খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। পেটব্যথা, শরীর দূর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে।সততা বেকারিতে গিয়ে ছবি তুলতে গেলে বেকারির মালিক সিরাজুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমার বেকারিতে আপনাদেরকে ঢোকার অনুমতি কে দিয়েছে? আপনি সাংবাদিক তাই কি হয়েছে? আপনি কি বেকারির মালিক? আমাদের নিষেধ আছে বেকারিতে কোন সাংবাদিক ঢুকতে পারবে না, কে নিষেধ করেছে এমন প্রশ্ন করলে বলেন, আমাদের বেকারী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান নিষেধ করেছে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরীর অনুমতি কে দিয়েছে এ কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যশোরের সভাপতি ও স্যানিটারি মহিলার সাথে কথা বলুন আর আমি এই বেকারির মালিক আমি যেটা বলবো সেটাই হবে। আপনারা পারলে যা কিছু লিখেন গিয়ে। পরে খোলা ব্যবহৃত টয়লেট থেকে দুই ফুট দুরত্বে খাদ্য রেখেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমরা বাথরুমের পাশে খাবার রাখবো সেই খাবার মানুষ খাবে তাতে আপনাদের কি। আপনারা ছবি তুলেছেন ? যান ছবি নিয়ে যা ইচ্ছা করেন তাতে আমার কোন যাই আসেনা।
খাদ্যে বেকিং পাউডার, ইষ্ট, স্যাকারিন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কি না এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইউছুফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মিটিং এ ব্যস্ত আছি আপনারা স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলুন।
শার্শার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সেফালি খাতুন বলেন, যেসব কারখানায় অস্বাস্থ্য ও নোংরা পরিবেশে ভেজাল খাদ্য তৈরী করেছে ওই সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হবে। এসব বেকারির সাথে তার কোন অর্থনৈতিক লেনদেন নেই বলে জানান। শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইসলাম বলেন, ওই সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবো এবং তারা খাদ্যনীতিমালা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।