গাজীপুর প্রতিনিধি৷৷ গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন জাতীয় শ্রমিকলীগের ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে স্বজনপ্রীতি ও অর্থের পকেট কমিটি দেয়া হচ্ছে।
নাম না বলার শর্তে এক শ্রমিকলীগ নেতা বলেন, সিভি জমা নেওয়ার দীর্ঘ ৭ মাস পর গত (২৩ মার্চ) বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ী থানার অন্তর্গত ৬ টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করা হয়নি মহানগরীর ৮ নং ওয়ার্ড জাতীয় শ্রমিকলীগের কমিটি। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পরে কমিটি ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় ৫ টি ওয়ার্ডের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যন্যা নেতাকর্মীরা ৮ নং ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সূত্রে জানাযায় ৬ টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা নিয়ে কোনাবাড়ী থানা জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি মোঃ জহির উদ্দিনকে প্রধান করে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। সেই মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৫ টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হলেও ৮ নং ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন কোনাবাড়ী থানা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হেসেন ভান্ডারী।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে স্বজনপ্রীতির। গুঞ্জন উঠেছে অর্থের বিনিময়ে আপন ভাগিনা পলাশ আলমগীরকে ৮ নং ওয়ার্ড জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি করা হবে। যারকারণে গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ৫ টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হলেও করা হয়নি ৮ নং ওয়ার্ডের।
ইতিমধ্যেই ৮ নং ওয়ার্ড জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী পলাশ আলমগীরের একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়। ওই কল রেকর্ডে পলাশ আলমগীরকে বলতে শোনা যায় আমি সভাপতি কালইকা সন্ধ্যায় ঘোষণা দিব কারো কাছে ডিসকাস করার দরকার নাই তুমি সহ-সভাপতি। ওই কল রেকর্ড নিয়েও শুরু হয়েছে হইচই।
এদিকে ৫ টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। কোনাবাড়ী থানা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ খলিলুর রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটস দিয়ে লিখেন “আমার জানামতে আওয়ামীলীগের সাথে সমন্বয় করে কোনাবাড়ী থানার ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের কমিটি দেওয়া হয় নাই।” গঠনতন্ত্র জেনে পড়ে মন্তব্য করব। এই পোস্টে ১৮২ টি লাইক ৫২ টি কমেন্ট দুইটি শেয়ার হয়। ওই পোস্টে কমেন্ট করেন ১০ নং ওয়ার্ড আ:লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন। তিনি লিখেছেন সহমত পোষণ করছি ভাই ১০ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যাকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাথে তার সমন্বয় বা যোগাযোগ আছে কিনা ব্যক্তিগত ভাবে আমি জানিনা ।
কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ সোলায়মান মিয়া ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেন “কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী শ্রমিকলীগ কোন পথে।”এই পোস্টে ৩১ টি লাইক ১৩ টি কমেন্ট কোন শেয়ার হয়নি। শ্রমিকনেতা জাহিদুল ইসলাম তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন “নেতাদের পতনের কারণ ইতিহাস সাক্ষী” বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতার পতন হয়েছে নিঃস্বার্থ কর্মীদের মূল্যায়ন না করা বিশ্বস্ত কর্মীদের দূরে সরিয়ে দালাল চামচাদের গুরুত্ব দেওয়া। তার এই পোস্টে ৮৬ টি লাইক ২৭ টি কমেন্ট এবং তিনটি শেয়ার হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কোনাবাড়ী থানা জাতীয় শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং সাংগঠনিকভাবে ৮ নং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সভপতি পদটি আলী হোসেন পায়। মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত দিয়েছে ঠিকই । কিন্তু সাধারণ সম্পাদক জাকির হেসেন ভান্ডারী কমিটির প্যাডে স্বাক্ষর করেনি। লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি পলাশ আলমগীরের সাথে লেনদেন হয়েছে। সত্য মিথ্যা জানিনা যেহেতু নিজে চোখে দেখিনি।
কোনাবাড়ী থানা জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হেসেন ভান্ডারী বলেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের দিক নির্দেশনায় ৫ টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে ৮ নং ওয়ার্ডের কমিটিও ঘোষণা করা হবে। কমিটি ঘোষণা করার পর অনেকের মন মতো হয়নি তাই মন্তব্য করতে পারে। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকলীগের বাইরে কাউকে পদ দেওয়া হয়নি। যারা দীর্ঘ দিন ধরে দলের জন্য নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করেছে শুধু তাদেরকে পদ দেওয়া হয়েছে। পলাশ আলমগীর এবং আলী হোসেন দুইজনের মধ্যে যে কোন একজনকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক করে ৮ নং ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হবে।
গাজীপুর মহানগর জাতীয় শ্রমিকলীগের ১ নং যুগ্ম-আহবায়ক কবির আহম্মেদ মন্ডল বলেন,কেউ যদি এ বিষয়ে অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তবে খুব শ্রীঘই ৮ নং ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হবে।