তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি বলেছেন, আমরা গবেষণামূলক কাজেও পিছিয়ে নেই। গবেষণার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী আগর শিল্পের উন্নয়নের লক্ষে প্রধানমন্ত্রী নিজে আগর বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউটকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বসত বাড়ি ও বনের কালো সোনা খ্যাত সুগন্ধি আগর শিল্প মৌলভীবাজার জেলা তথা বড়লেখার প্রাচীন ঐতিহ্য। ইতিমধ্যে মৌলভীবাজার জেলাকে ওয়ান ডিস্ট্রিক ওয়ান প্রোডাক্ট হিসেবে আগরকে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আগরকে ক্ষুদ্র শিল্প ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
এই অঞ্চলের আগর-আতর ব্যবসায়ি সমিতি, গাছ মালিক ও চাষিদের সাথে সমন্বয় করে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউট দীর্ঘদিন ধরে আগর বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতমানের আগর রেজিন এ উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি করা হবে। এতে কোন গাছ মারা যাবে না বা পরিবেশেরও কোনরূপ ক্ষতি হবে না। আগর শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি মৌলভীবাজারের বড়লেখায় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হলে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দিনব্যাপি সম্পূর্ণ বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচিতিমূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউট এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইন্সটিটিউটের (চট্টগ্রাম) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. রফিকুল হায়দার।
প্রকল্পের পরিচিতি ও অগ্রগতি উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসাইন। তিনি বলেন, বিশ্বের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ আগর-আতর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানী হয়ে থাকে। এতে ৩০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। বছরে দুই হাজার কোটি টাকার আগর-আতর রপ্তানীর সম্ভাবনা রয়েছে। এর লক্ষেই আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মশালায় ব্যবসায়ীরা বলেন, আতর উৎপাদনের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাস বিল বাণিজ্যিক ২৬.৭৮ টাকা হারে নির্ধারণ ও আদায়। যেখানে ক্ষুদ্রশিল্পের হার ১০.২৫ টাকা। উৎপাদন খরচ অত্যধিক হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে বসেছে আগর শিল্প। অথচ ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আগর উৎপাদন খাতকে ক্ষুদ্রশিল্প ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। চলিত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এ খাতকে বিশেষ উন্নয়নমুলক খাতে অন্তর্ভূক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আগর প্ল্যান্টের গ্যাস বিল ক্ষুদ্রশিল্প হিসেবে আদায় না করে আজও বাণিজ্যিক শিল্প হারে আদায় করা হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর আশংকা দেখা দিয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে ও বড়লেখা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের উপস্থাপনায় কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি, অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী, উপ-সচিব সাহানারা বেগম, প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বাংলাদেশ আগর এন্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আনছারুল হক, বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) তাজ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রণয় কুমার দে প্রমুখ।