নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের অন্তর্ভূক্ত বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেক্ট্রোডস্ লিমিটেড। অর্থ সংক্রান্ত সকল তথ্যই গোপন করে রেখেছে কোম্পানিটি। ওয়েবসাইট বন্ধ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি ছাড়াই চলছে কোম্পানিটির লেনদেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে তথ্যটি জানা যায়।
আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির নেই কোন কোম্পানি সেক্রেটারি, নেই কোন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট না থাকায় কোম্পানিটি প্রকাশ করেনি কোন প্রকার আর্থিক বার্ষিক প্রতিবেদন, পিএসআই, এবং কোন নোটিশ।
যদিও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ কিংবা চালুর বিষয় এবং সকল আর্থিক বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ মূল্যসংবেদনশীল তথ্য। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এ ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ারহোল্ডারদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেক্ট্রোডস লিমিটেড এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ না করায় কয়েক বছর ধরে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন বিনিয়োগকারিরা।
কোম্পানিটির উৎপাদন আদৌ চালু আছে কি না এ বিষয়ে জানতে, ডিএসইতে দেওয়া কোম্পানির নাম্বারে ফোন করলে, কোম্পানির দেওয়া সবকটি নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। যার ফলে কোম্পানির বর্তমান উৎপাদন এবং অর্থসংক্রান্ত কোন তথ্যই জানা যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান অপারেশন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন,“ এরকম আরো কিছু কোম্পানি আছে যারা তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ রেখে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো গোপন করে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সকল কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে ব্যাবস্থা নিচ্ছে”।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মোঃ মিজানুর রহমান (এফসিএস) বলেন, শুধু বাংলাদেশ ওয়েলডিং নয় অনেক কোম্পানিই নানারকম অনিয়ম নিয়েই বাজারে লেনদেন চলমান রেখেছে। কিন্তু দু:খজনক ব্যাপার হলো কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড জারি হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঠিক তদারকির অভাবে ঝুঁকিতেই থেকে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ”।
সব কিছু ধোঁয়সা রেখেই বাজারে লেনদেন চলমান রেখেছে বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেক্ট্রোডস লিমিটেড। আর এই অবস্থার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ঢিলে ঢালা মনিটরিং কে দায়ি করছেন বাজার বিশ্লেষকরা ।
এদিকে বিগত তিন বছর বিনিয়োগকারিদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। এবং পূর্বেও অনিয়মিত ভাবে ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেক্ট্রোডস লিমিটেড।
কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। কোম্পানিটির লভ্যাংশ প্রদানের রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ডিভিডেন্ড দেয় ১ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড , ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ, ২০১২ সালে ৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ৫ শতাংশ, ২০১০ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড।
ডিএসই তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩০৫ টি। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩১.০১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ২.৮৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারি ০.৭২ শতাংশ এবং বাকি ৬৫.৩৯ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারিদের হাতে।
গত শপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৮.৪৫ শতাংশ বৃ্দ্ধি পেয়ে সর্বশেষ শেষ দর দাঁড়িয়েছে ২১ টাকায়। ঐ দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ওঠানামা করে ১৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ২১ টাকা ৩০ পয়সায়। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় সর্বনিম্ন ১৪.৪০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৬.৮০ টাকা।
৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ১৯৯৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেক্ট্রোডস লিমিটেড। কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি ১৯৯৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে মার্কেটের জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।