নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের অন্তর্ভুক্ত আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইট থাকলেও হালনাগাদ নেই দীর্ঘদিন। পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, বিগত ৪ বছরেও কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, নোটিশ এবং কোন আর্থিক বিবরণী প্রকাশিত হয়নি কোম্পানির ওয়েবসাইটে। যার কারনে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছেন না বিনিয়ােগকারিরা।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির সকল প্রকার নোটিশ এবং উৎপাদন বন্ধ কিংবা চালুর বিষয় অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এ ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ার হোল্ডারদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ডিএসইকে জানালেও বিগত ৪ বছর ধরে কোন প্রকার তথ্য প্রকাশ না করায় কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা।
ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির বোর্ড অব ডিরেক্টরের শুধুমাত্র নাম প্রকাশ করেই দায় সেরেছে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। তাদের কোন বিস্তারিত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।
এ সকল তথ্য কেন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছেনা? ডিএসইর কোম্পানি প্রোফাইলে দেওয়া নাম্বারে ফোন করলে এই বিষয়ে জানতে চাইলে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য কর্পোরেট সংবাদকে জানায়নি আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং এর ঐ প্রতিনিধি। এবং টেলিফোনে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারির সাথেও যোগাযোগ করা যায়নি।
গত বছর কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আজিমুল ইসলাম সহ আরো ২ কোম্পানির মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগ নিষেধাঞ্জা চেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি দিয়েছিলো বিএসইসি। চিঠিতে বলা হয়েছিলো, “উল্লেখিত ব্যক্তি শেয়ারবাজার থেকে বিভিন্ন সময়ে আইপিও, আরপিও এবং রাইট শেয়ার অফারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করেন এবং সেকেন্ডারি মার্কেটে তাদের ধারণকৃত বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেন। ইহাতে কমিশনের বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে”। এ প্রেক্ষিতে কমিশন কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ওয়েব সাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ আর্থিক বিবরণী পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিলো ১.৭৩ টাকা। এবং নিট এ্যাসেট ভ্যালু ছিলো ১৫.৩০ টাকা। ডিএসই তে প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকের অনিরিক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে দেখা যায়, ২০২১ সালে এসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১৫ পয়সা। এবং শেয়ারপ্রতি নিট এ্যাসেট ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ১৪.৩২ টাকায়।
সব কিছু ধোঁয়াসা রেখেই বাজারে লেনদেন চলমান রেখেছে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিরব ভুমিকা, এসব কোম্পানিদের অনিয়মে সাহস জোগাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার কারনে এতো কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড জারি হলেও মেনে চলছে না এসব প্রতিষ্ঠান।সে কারনেই ঝুঁকি বাড়ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারন বিনিয়োগকারি।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মোঃ মিজানুর রহমান এফসিএস, কর্পোরেট সংবাদকে বলেন, “এসব কোম্পানির কারনেই বিনিয়োগকারিরা প্রতারনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত, এমনকি নতুন করে বিনিয়োগ করার সাহসও হারাচ্ছেন। যার কারনে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে পুঁজিবাজারের”।
পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এবং বিনিয়োগকারিদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আরো কঠোর ভাবে মনিটরিং করার পরামর্শ দিয়ছেন এই বিশেষজ্ঞ।
১৯৯৭ সালে ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদন সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ২৫৯ কোটি ৯২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের পরিমান ২৫ কোটি ৯৯ লক্ষ ২৭ হাজার ২৩ টি। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশ এর উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়েগকারি ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বাকি ৫৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগ কারিদের হাতে।