নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চামড়া-শিল্প খাতের অন্তর্ভুক্ত লিগ্যাসি ফুটওয়ার লিমিটেডের অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে প্রতিনিয়ত। কোম্পানির ওয়েব সাইটে আর্থিক বিবরনী থাকলেও কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরের বিস্তারিত কোন তথ্য দেওয়া নেই। শুধু নাম প্রকাশ করেই দায় সেড়েছে কোম্পানিটি।
৭৫টাকা অনুমোদন সাপেক্ষে ২০০০ সালে পুঁজিবাজারের তালিকায় আসে লিগ্যাসি ফুটওয়ার লিমিটেড। পর্যবেক্ষনে জানা গেছে, কোম্পানিটির তিন জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে দুজন কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোডের কোন ভিত্তিতে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত আছেন, এ সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইট কিংবা প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনেও বিস্তারিত উল্লেখ করেনি।
কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানি সেক্রেটারি দ্বারা স্বাক্ষরিত থাকলেও, ডিএসইর কোম্পানি প্রোফাইলে, কোম্পানি সেক্রেটারির কোন তথ্য দেওয়া নেই। আদৌ প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি আছে কিনা এ বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়।
কোম্পানিটির উৎপাদন আদৌ চালু আছে কিনা এবং কোম্পানির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে ডিএসইর কোম্পানি প্রফাইলে দেওয়া নাম্বারে ফোন করলে নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায় । যার কারনে কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়নি।
কোম্পানিটির ডেভিডেন্ড ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কোম্পানিটি ডেভিডেন্ড প্রদানেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। কোম্পানিটি বিগত ৫ বছরে ডেভিডেন্ড দেয় ২০২১ সালে ১ শতাংশ ক্যাশ ডেভিডেন্ড, ২০১৯ সালে ৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১৫ শতাংশ স্টক ডেভিডেন্ড এবং ৫ শতাংশ ক্যাশ ডেভিডেন্ড, ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ স্টক ডেভিডেন্ড এবং ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডেভিডেন্ড প্রদান করে। ২০২০ সালের কোন প্রকার ডেভিডেন্ড প্রদান এর তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০১৮ সালের ২০ জুন বিএসইসি কর্তৃক ডিসক্লোজার সংক্রান্ত নটিফিকেশন এর ৯ এর ১ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে যে, পুঁজিবাজারে বিসিইসির তালিকা ভুক্ত সকল কোম্পানিকে এজিএম এর নূন্যতম ১৪ দিন পূর্বে বাধ্যতামুলক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনের সফট কপি কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের কাছে ইমেইলে পাঠাতে হবে। এবং ৯ এর ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রতিটি কোম্পানিকে এজিএম এর ১৪ দিন আগে বার্ষিক প্রতিবেদন কোম্পানি ওয়েবসাইটে প্রকাশের করে সেই তথ্য দৈনিক বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে নোটিশ প্রকাশ করে সাধারন বিনিয়োগকারিদের জানাতে হবে। যার কোনটাই করেনি লিগ্যাসি ফুটওয়ার। যার কারনে কোম্পানি সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারছেনা বিনিয়োগকারিরা।
কোম্পানিটির গত ৫ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষনে দেখা যায় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে কোম্পানিটির কর পরবর্তি মুনাফা ছিলো ১ কোটি ১৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৬৬ টাকা। ক্রমান্বয়ে পরবর্তি ২ বছর মুনাফা বাড়লেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এসে কোম্পানিটি আবার লসের ধাক্কায় পড়ে যায়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস দাঁড়ায় ৭.৩৭ টাকা। এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এসে কোম্পানিটির কর পরবর্তি মোট মুনাফা দাড়ায় ৫১ লক্ষ ৯৭ হাজার ১৭৫ টাকা।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষন অনুযায়ী, ৩০ জুন ২০২১ শেষে কোম্পানিটির মোট পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমান দাড়ায় ৬ কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৪ টাকা।
এদিকে দেনা বেড়েই চলেছে কোম্পানিটির। ৩০ জুন ২০২১ শেষে কোম্পানিটির মোট ব্যাংক ঋনের পরিমান দাড়ায় ২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৬০ টাকা। যা আগের বছর ছিলো ২৬ কোটি ৫৭ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৬ টাকা। এবং ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির টেম্পোরারি লোনের পরিমান দাড়ায় ৫২ লাখ টাকা।
এদিকে আজকেও কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২.৭৯ শতাংশ। কোম্পানিটির গতকালের ক্লোজিং প্রাইস ছিলো ৬৪.৫০ টাকা। কোম্পানি আজকের ওপেনিং প্রাইস ৬৪ টাকা এবং ক্লোজিং প্রাইস ৬২.৮০ টাকা । কোম্পানিটি আজকে ২০১ বারে ৪২ হাজার ৬৩২ টি শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার মূল্য ২৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার ওঠানামা করে সর্বোনিম্ন ৫০.৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮৪.৪০ টাকায়।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার ১ কোটি ৩০ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা ৯৮০ টি। তারমধ্যে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১০.৭৫ শতাংশ এবং বাকি ৫৯.২৫ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগ কারিদের হাতে। কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে মার্কেটের বি ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।