স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটার জনসন চার্লসের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে খুলনা টাইগার্সের ছুঁড়ে দেয়া ২১১ রানের টার্গেট স্পর্শ করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে রেকর্ড জয়ের নজির গড়লো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
বিপিএল নবম আসরের ৩২তম ম্যাচে কুমিল্লা ৭ উইকেটে হারিয়েছে খুলনাকে। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ২১০ রান করেছে খুলনা। তামিম ইকবাল করেন ৯৫ রান। এছাড়া শাই হোপ ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন। জবাবে ১০ বল বাকী থাকতে ৩ উইকেটে ২১৩ রান করে ম্যাচ জিতে কুমিল্লা। বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড এটি। ৫৬ বলে ১০৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন জনসন। দলের জয়ে অবদান রাখেন ৩৯ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলা পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানও।
৯ ম্যাচ শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয়স্থানে থাকলো কুমিল্লা। ১২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফরচুন বরিশাল। ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে খুলনা টাইগার্স।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। ইয়াসির আলির পরিবর্তে খুলনার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েছেন হোপ। ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় খুলনা। কুমিল্লার পাকিস্তানী পেসার নাসিম শাহর বলে আউট হন ৫ রান করা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
এরপর ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন হোপ। পাওয়ার-প্লেতে ৩৭ রান উঠলেও, পরবর্তীতে রানের গতি বাড়িয়েছেন দু’জনেই। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১০ ওভার শেষে ৮৫ রান পায় খুলনা।
১১তম ওভারে ২৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরির পূর্ণ করেন হোপ। ১২তম ওভারে খুলনার রান ১শতে পৌছে যায়। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে এবারের আসরে দ্বিতীয় অর্ধশতকের দেখা ৪৫ রানে জীবন পাওয়া তামিম। এজন্য ৪৫ বল খেলেছেন তিনি। স্পিনার তানভীর ইসলামের করা ঐ ওভারে আরও ২টি ছয় ও ১টি চার মারেন তামিম। এতে ওভার থেকে ২৭ রান পায় খুলনা। ১৫ ওভার শেষে খুলনার রান গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০এ।
১৯ ওভার শেষে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান তামিম ও হোপ। তখন দলীয় রান ১৯৭। মোসাদ্দেক হোসেনের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হলে ৬১ বল খেলে ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৯৫ রান করা তামিমের ইনিংসের ইতি ঘটে। দ্বিতীয় উইকেটে হোপের সাথে ১০৪ বলে ১৮৪ রান যোগ করেন তামিম। যা এবারের বিপিএলে যেকোন উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। আর বিপিএল ইতিহাসে জুটিতে যৌথভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান।
তামিম ফেরার পর উইকেটে এসেই ১টি করে চার-ছয় মারেন পাকিস্তানের আজম খান। শেষ তিন বলে আসে ৩ রান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ২ উইকেটে ২১০ রান পায় খুলনা। ৫৫ বল খেলে ৯১ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন হোপ। ৫টি চার ও ৭টি ছক্কা মারেন তিনি। ৪ বলে ১২ রান তুলে অপরাজিত থাকেন আজম। কুমিল্লার নাসিম-মোসাদ্দেক ১টি করে উইকেট নেন। ২১১ রানের বিশাল টার্গেটে রেকর্ড জয়ের লক্ষ্যে নেমে প্রথম ওভরেই ধাক্কা খায় কুমিল্লা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে পেসার শফিকুল ইসলামের বলে হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন দাস।
লিটনের আহত অবসরে উইকেটে আসেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। শফিকুলের শিকার হয়ে ৫ রানে ফিরেন তিনি। দলীয় ২২ রানে ইমরুলের আউটের পর খুলনার বোলারদের উপর চড়াও হন ওপেনার পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান। শফিকুলের করা পঞ্চম ওভারে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ রান তুলেন রিজওয়ান। পাওয়ার প্লেতে ৫৩ রান পায় কুমিল্লা। চার নম্বরে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনসন চার্লস প্রথম দিকে সতর্ক থাকলেও পাওয়ার প্লে শেষে মারমুখী ওঠেন।
নবম ওভারে ২৪ বলে আসরের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন রিজওয়ান। ১১ তম ওভারে কুমিল্লার রান ১শ স্পর্শ করে। পাকিস্তানের আমাদ বাটের করা ১৩তম ওভারে ৩টি ছক্কা ও ১টি চারে ২৪ রান নেন জনসন। পরের ওভারে রিজওয়ানকে শিকার করে খুলনাকে ব্রেক থ্রু এনে দেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন রিজওয়ান। তৃতীয় উইকেটে জনসনের সাথে ৬৯ বলে ১২২ রান যোগ করেন তিনি।
১৫তম ওভারে স্পিনার নাহিদুলের ইসলামের বলে চারটি ছক্কা মারেন জনসন। বাটের করা ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জনসন। ৫৩ বল খেলে এবারের চতুর্থ সেঞ্চুরিয়ান বনে যান জনসন। আগের তিনটি সেঞ্চুরিও এসেছে বিদেশীদের ব্যাট থেকে।
জনসনের সেঞ্চুরির ওভারে ১২ রান করে আউট হন পাকিস্তানের খুশদিল শাহ। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে কুমিল্লাকে দুর্দান্ত জয়ের স্বাদ দেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া জনসন। ৫টি চার ও ১১টি ছক্কায় ৫৬ বলে ১০৭ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন এ ডান-হাতি ব্যাটার।
২১১ রানের টার্গেটে ৩ উইকেটে ২১৩ রান করে ম্যাচ জিতে বিপিএলে রেকর্ড গড়ে কুমিল্লা। সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ে এটিই সেরা। আগেরটি ছিলো ২০২০ সালে। ঢাকা প্লাটুনের করা ২০৫ রানের জবাবে ২ উইকেট ২০৭ রান করেছিলো খুলনা টাইগার্স। এ ম্যাচ দিয়ে শেষ হলো বিপিএল সিলেট পর্ব।