স্পোর্টস ডেস্ক : দুই ব্যাটার তৌহিদ হৃদয় ও জাকির হাসানের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরির পর পেসার রুবেল হোসেনের দারুন বোলিং নৈপুন্যে প্রথম দল হিসেবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নবম আসরের প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স।
বিপিএলের ৩০তম ম্যাচে মাশরাফি-মুশফিকের সিলেট ৩১ রানে হারিয়েছে তামিমের খুলনা টাইগার্সকে। ১০ ম্যাচে ৮ জয় ও ২ হারে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে প্লে-অফ খেলা নিশ্চিত করলো সিলেট। ৮ ম্যাচে ২ জয় ও ৬ হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানেই থাকলো খুলনা।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেন খুলনার অধিনায়ক ইয়াসির আলি। প্রথমে ব্যাটিং পেয়ে সিলেটকে ২৮ বলে মাত্র ২৫ রানের সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার মার্ক দেয়ালের বলে আউট হবার আগে জুটিতে ১২ বল খেলে মাত্র ৬ রান করে আউট হন আগের ম্যাচের হিরো শান্ত।
পঞ্চম ওভারে শান্ত ফেরার পর বড় জুটি গড়েন হৃদয় ও তিন নম্বরে নামা জাকির হাসান। খুলনার স্পিনার নাসুম আহমেদের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ৩টি চার মারেন তারা। ১০ম ওভারে আক্রমনে আসা নাসুমের ডেলিভারিতে দু’টি ছক্কা হাঁকান জাকির। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারিতে এবারের আসরে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়।
৩৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়ার পর নিজের ইনিংস বড় করেছেন হৃদয়। তাকে সঙ্গ দিয়ে দ্রুত রান তুলেন জাকির। অবশেষে ১৬তম ওভারে দলীয় ১৩৯ রানে বিচ্ছিন্ন হৃদয় ও জাকির। পেসার নাহিদ রানার বলে আউট হওয়ার আগে ৯টি চারে ৪৯ বলে ৭৪ রান করেন হৃদয়। দ্বিতীয় উইকেটে জাকির-হৃদয় জুটিতে ৬৮ বলে ১১৪ রান যোগ করেন।
হৃদয় ফেরার ওভারেই ছক্কায় এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান জাকির। ৩৬বলে হাফ সেঞ্চুরির পর ৩৮তম বলেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন জাকির। স্পিনার নাহিদুল ইসলামের বলে বোল্ড আউট হওয়ার আগে ৩৮ বল খেলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন জাকির।
এ দিকে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুললেও ৭ রানের বেশি করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। তার আউটের পর ইনিংসের শেষ ১০ বলে চার-ছক্কায় মাতেন শ্রীলংকার থিসারা পেরেরা ও জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল। পেরেরা ২টি চার ও ১টি ছয় এবং বার্ল ২টি ছয় মারেন। শেষ ১০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩০ রান যোগ করেন তারা। এতে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে সিলেট পায় ১৯২ রানের বিশাল সংগ্রহ। পেরেরা ৭ বলে ১৭ ও বার্ল ১১ বলে অপরাজিত ২১ রান করেন। খুলনার দেয়াল ৪০ রানে ২ উইকেট নেন।
১৯৩ রানের বড় টার্গেটের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই সিলেটের পেসার রুবেল হোসেনের তোপের মুখে পড়ে খুলনা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে জোড়া উইকেট তুলে নেন রুবেল। ওভারের প্রথম বলে আয়ারল্যান্ডের এন্ড্রি ব্যালবির্নিকে ৭ ও তামিম ইকবালকে ১২ রানে আউট করেন রুবেল।
২০ রানে ২ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ ও মাহমুদুল হাসান জয়। ৩৫ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়ে খুলনাকে লড়াইয়ে রাখেন তারা। মারমুখী মেজাজে থাকা হোপকে শিকার করে সিলেটকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার রেজাউর রহমান। ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ৩৩ রান করেন হোপ।
হোপের আউটে উইকেটে এসেই দ্রুত রান তুলতে থাকেন পাকিস্তানের আজম খান। পেরেরার করা ১১তম ওভারে ১টি ছয় ও ২টি চারে দলকে ১৭ রান এনে দেন আজম।
১২তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত আক্রমনে এসেই জয়কে বিদায় করেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির। ২১ বলে ২০ রান করেন জয়। এই উইকেট নিয়ে বিপিএলে ৫০ উইকেট পূর্ণ করেন আমির। পরের ওভারে পাকিস্তানের আরেক স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমের বলে বোল্ড হন আজম। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৭ বলে ৩৩ রান করেন তিনি।
১৫তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমনে এসে দেয়ালকে ৩ রানে বোল্ড করেন রুবেল। ম্যাচে তৃতীয় উইকেট নিয়ে বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন রুবেল। এর আগে প্রথম বোলার হিসেবে বিপিএলে ১শ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।
এরপর খুলনার অধিনায়ক ইয়াসির আলিকে ৪ রানে বিদায় দিয়ে সিলেটের জয়ের পথ সহজ করেন রাজা। শেষ দিকে সাইফুদ্দিনকে ১৩ রানে রুবেল ও নাহিদুলকে ৯ রানে শিকার করেন আমির। ৮ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন নাসুম। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬১ রান তুলে ম্যাচ হারে খুলনা। সিলেটের রুবেল ৩৭ রানে ৪ এবং আমির ২৮ ও রাজা ২৯ রানে ২টি করে উইকেট নেন।