কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: চট্টগ্রামে উত্তরা ব্যাংকের প্রায় ৩১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির চার ছেলের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১২ মে) অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম।
যাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রীর ছেলে মুজিবুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও ওয়াহিদুল ইসলামে। মুজিবুর রহমান সাবেক মন্ত্রীর মালিকানাধীন সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অন্য তিনজন একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।
মামলার নথি পর্যালোচনায় জানা গেছে, উত্তরা ব্যাংক থেকে দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৭ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেডের নামে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯ টাকা ও ইউনিল্যাক সানোয়ারা বিডি লিমিটেডের ২ কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৬৭ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যাংকে কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়নি। বিবাদীদের ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা ও ট্রাস্ট রিসিটের ভিত্তিতে এই ঋণ মঞ্জুর করেছিল ব্যাংক।
নির্ধারিত সময়ে পরিশোধযোগ্য ঋণ হিসেবে আরোপিত সুদ ছিল এক কোটি ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার ১১৭ টাকা। সুদসহ মোট স্থিতি ২২ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার ৮২৪ টাকা। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয় ব্যাংক। এরপরও ঋণ পরিশোধ না করায় সুদ আরোপ হয় আরও ৮ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৬২৪ টাকা।
এর ফলে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকের মোট দাবি অর্থাৎ দুই প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৩০ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৯ টাকা ৩৯ পয়সা।
খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর উত্তরা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার প্রিন্সিপ্যাল অফিসার এ এস এম ফয়জুল আলম চৌধুরী আদালতে মামলা করেন। এতে দুটি প্রতিষ্ঠানকে বিবাদি করা হয়। এছাড়া নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার স্ত্রী সানোয়ারা বেগম এবং পাঁচ ছেলেকেও বিবাদি করা হয়।
এ অবস্থায় গত ২ মে বাদি আদালতে বিবাদিদের পাসপোর্ট জব্দ করে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আবেদন করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, মামলা দায়েরের পর থেকে শুধুমাত্র একজন ছাড়া আর কোনো বিবাদি আদালতে হাজির হননি। ঋণ পরিশোধেরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং তারা দেশ ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে বাদি জানতে পেরেছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ব্যাংকের আবেদনের ওপর রোববার শুনানি হয়েছে। আদালত চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তারা যাতে আদালতের অনুমতি ব্যতীত কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
নুরুল ইসলাম বিএসসি একাধারে শিল্পপতি ও রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসন থেকে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরেরবার আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তবে সেবার তাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করা হয়েছিল।
মন্ত্রীত্ব যাবার পর অবশ্য রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় আছেন। তার ছেলে মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হন।