এবার অ্যানিমেটেড ডিজিটাল শিক্ষাউপকরণের মাধ্যমে সারা দেশের কিশোর-কিশোরীরা বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যশিক্ষা, সুস্থতা এবং মর্যাদা সম্পর্কে জানতে পারবে সহজেই
বিনোদন ডেস্ক : জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) বাংলাদেশ কিশোর-কিশোরীদের জন্য নির্মিত শিক্ষামূলক অ্যানিমেশন সিরিজ শাহানা কার্টুন তৃতীয় সিরিজ-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেছে।
অনুষ্ঠানটি রবিবার (২৪ মার্চ) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কিশোর-কিশোরী ও শিক্ষকবৃন্দের পাশাপাশি সরকারি সংস্থা, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, উন্নয়ন সহযোগী, দূতাবাস, দাতা সংস্থা, বেসরকারি খাতের অংশীদার, গণমাধ্যম এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার স্টেকহোল্ডারবৃন্দ অংশ নেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (DSHE) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তায় UNFPA নির্মিত শাহানা কার্টুনের লক্ষ্য হল খুব অল্প বয়স্ক কিশোরী এবং ছেলেদের স্বাস্থ্য, সুস্থতা এবং মর্যাদা বিষয়ে জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা। আকর্ষণীয় গল্প বলার ধরন এবং প্রাণবন্ত ভিজ্যুয়্যালসহ সর্বশেষ সিরিজটি আগামী প্রজন্মের কাছে অমূল্য পাঠ প্রদান করবে, তাদের সক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বলে এর নির্মাতা ও পরিবেশকবৃন্দ মনে করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এম.পি.। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, শাহানা কার্টুনের আগের সিরিজটি বাংলাদেশের স্কুল পাঠ্যক্রমে ৬ষ্ঠ থেকে ৯/১০ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সহায়ক হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। এটি কিশোর-কিশোরীদের সমৃদ্ধ করবে, এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখবে। এই কার্টুনটি তাদের বয়সের সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের এই গুরুত্বপূর্ণ বয়ঃসন্ধিকালে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে, তাদের মাঝে গড়ে তুলবে পারস্পরিক সম্মানবোধ, মর্যাদা, বৈচিত্র্য এবং লিঙ্গ-সমতাভিত্তিক মূল্যবোধ এবং যৌন হয়রানি ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের মানসিকতা।”
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সুলেমান খান এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মিজ কেয়া খান।
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মিসেস ক্রিস্টিন ব্লোখুস অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার বক্তব্যে তিনি শাহানা কার্টুনের মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “একজন সাহসী এবং কৌতূহলী তরুণী শাহানা এমন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় যা তার বয়সী ছেলেমেয়েদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। যেমন : বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন সমস্যা, যৌন হয়রানি এবং সহিংসতা, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি। শাহানা তার বন্ধুবান্ধব, এলাকাবাসী এবং পরিবারের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করে। সমর্থন এবং সংহতি – এই দুই হলো তরুণদের প্রতি শাহানার মূল বার্তা।”
শাহানা কার্টুন সিরিজ : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক বিবর্তনের যাত্রা
২০১৫ সালে শুরু হওয়া শাহানা কার্টুন সিরিজের লক্ষ্য হলো কিশোর-কিশোরীদের নিজেদের স্বাস্থ্য, সুস্থতা এবং মর্যাদা বিষয়ে সচেতন করা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করা, যা একাধারে তাদের (১) স্বাস্থ্য, সুস্থতা এবং মর্যাদা উপলব্ধি করতে সক্ষম করে তোলে; (২) সম্মানজনক এবং অন্তরঙ্গ সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে; (৩) নিজেদের কর্ম কীভাবে নিজেদের এবং অন্যদের জীবনকে প্রভাবিত করে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে; এবং (৪) নিজের অধিকার রক্ষা ও তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সচেতন করে তোলে।
এই সিরিজের প্রধান চরিত্র শাহানা এবং তার বন্ধুরা এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একটি ‘কিশোর-কিশোরী’ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। পূর্ববর্তী সিরিজে ১৫ মিনিটের দশটি পর্ব রয়েছে যা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সহায়ক হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে।
শাহানা কার্টুনের পর্বসমূহ বয়ঃসন্ধি, পারস্পরিক সম্পর্ক, আবেগ এবং বৈচিত্র্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়কে ঘিরে রচিত। এছাড়াও, এটি বাল্যবিবাহ এবং কিশোরী গর্ভাবস্থার উপর বিশেষ ফোকাসসহ বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (অঝজঐজ), লিঙ্গ সমতা, এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কিত নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে।
শাহানা কার্টুন নির্মাণে ইউএনএফপিএ সরকারের পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি সারা দেশের কিশোর-কিশোরী ও তাদের শিক্ষকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছে। আর এভাবেই কিশোর-কিশোরীদের আগ্রহ ও চাওয়া-পাওয়াগুলো এবং তাদের বিভিন্ন ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া এই কার্টুন সিরিজের মাঝে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত, শাহানা কার্টুন সিরিজটি ৩৩,০০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়েছে। সেই সাথে ২০২৩ সালে এই সিরিজের অতিরিক্ত চারটি পর্ব নির্মাণ করা হয়।
অ্যানিমেটেড কার্টুন শিশু-কিশোর-কিশোরীদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দেওয়ার একটি কার্যকর উপায়, তাদের স্বাস্থ্য এবং লিঙ্গসম্পর্কিত ধারণাগুলি বুঝতে এবং জ্ঞান ধারণকে উন্নত করতে এটি সহায়তা করে – একারণেই টঘঋচঅ শাহানা কার্টুন নির্মাণ ও প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
শাহানা কার্টুন তৃতীয় সিরিজ-এর উদ্বোধন বাংলাদেশে ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার সম্প্রসারণে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সিরিজটির মাধ্যমে সারা দেশের লাখ লাখ কিশোর-কিশোরীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে যা নতুন প্রজন্মকে নতুন উদ্দীপনায় সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।