কর্পোরেট ডেস্ক: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মনজুর আহমদ রচিত “একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর” শীর্ষক বইয়ের ওপর মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলরের কনফারেন্স কক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। প্রথমা প্রকাশনের এই বইটি গত বছর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বই হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এবং এজন্য মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেছে প্রথমা প্রকাশন।
এ্ই বইটিতে প্রফেসর মনজুর আহমদ বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তর ও সব ধারা- উপধারার পরিচয় প্রদান এবং এর বাস্তবতা বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে তিনি এই বইয়ে তার নিজস্ব চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিক্ষা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
“একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর” বইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং টিচ ফর বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া ইসলাম মজুমদার।
এর আগে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। প্রফেসর আলমগীর অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভূমিকার প্রশংসা করেন ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই ক্যাম্পাস বাকিদের জন্য একটি উদাহরণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর” বইয়ের ওপর আলোচনায় এই বইটিকে বাংলাদেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বই বলে অভিহিত করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে শিক্ষায় সংকট মোকাবিলার প্রথম ধাপ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থায় সবকিছুই ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন। কারিকুলাম বদলানোর খুব বেশি দরকার নেই, আমাদের শিক্ষার পদ্ধতি বদলাতে হবে। শিক্ষায় ইনোভেশন নিয়ে আসতে হবে।”
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ তার বক্তব্যে একটি যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বৃহত্তর এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার মানোন্নয়নে আধুনিক কারিকুলাম, শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং চলমান মূল্যায়ন প্রক্রিয়া থাকতে হবে।” প্রফেসর মনজুর আহমদের বইটি শিক্ষার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সবাইকে পথ দেখাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই বইটিকে একটি সামগ্রিক গবেষণা গ্রন্থ বলে মনে অভিহিত করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “শিক্ষা সংস্কৃতির অংশ। শিক্ষায় সংস্কৃতির প্রতিফলন থাকতে হবে। শিক্ষা হতে হবে আনন্দপূর্ণ, জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, শিক্ষায় স্থানীয় এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণের মিল থাকতে হবে। প্রফেসর মনজুরের এই বইটি শিক্ষা গবেষকদের একটা পাথেয় প্রদান করবে।” ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে যেভাবে সুন্দর পরিবেশে শিক্ষা প্রদান করা হয় দেশের বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সেভাবেই শিক্ষা প্রদান করা উচিত বলে মন্তব্য করেন এই গুণী শিক্ষাবিদ।
বইটির রচয়িতা প্রফেসর মনজুর আহমদ বলেন, “সামগ্রিকভাবে শিক্ষার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আমাদের অগ্রাধিকার সেট করতে হবে। শিক্ষাখাতের জন্য একটি সমন্বিত শিক্ষা পরিকল্পনা গঠন করা এখন সময়ে দাবী।“ সেই সাথে তিনি শিক্ষার উন্নয়নে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
টিচ ফর বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া ইসলাম মজুমদার বলেন, “এই বইটির মতো ভালো গবেষণাগ্রন্থ বাংলায় খুব বেশি একটা নেই। অনেক অনেক বছর পরেও গবেষকরা এই বইটিকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করবেন।”
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নবীন গবেষক এবং শিক্ষাবিদরা এই বহুমাত্রিক আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর অফ কমিউনিকেশন্স খায়রুল বাশার।
প্রফেসর মনজুর আহমদ সম্পর্কে:
প্রফেসর মনজুর আহমদ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত থেকে প্রাক-স্নাতক শিক্ষা সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ কলোরাডো, ও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে উচ্চাশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। তিনি চীন, ইথিওপিয়া ও জাপানে ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং এবং ইউনিসেফের প্রধান দফতরে জ্যেষ্ঠ শিক্ষা পরামর্শক ছিলেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল ডেভলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ গবেষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন, এডুকেশন ওয়াচ বাংলাদেশের আহবায়ক এবং শিক্ষার প্রায়োগিক এবং তাত্ত্বিক আলোচনায় অনেকগুলো বইয়ের লেখক।