নিজস্ব প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত নরসিংদী জেলার শিবপুর এলাকায় সাইফুল ইসলাম (৫০) কে গলাকেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংসভাবে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অন্যতম প্রধান ক্লুলেস আসামী মোঃ জুনায়েদ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, নরসিংদী জেলার শিবপুর এলাকায় গলাকেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি মো. জুনায়েদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় র্যাব-৩ গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, নরসিংদী জেলার শিবপুর থানা এলাকায় গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ রাতে গরুর ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম (৫০) কে গলাকেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পরদিন ভিকটিম সাইফুল এর স্ত্রী বাদী হয়ে তাজুল ইসলাম ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তিকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম সাইফুল এবং আসামী তাজুল নরসিংদী জেলার শিবপুর একই এলাকার বাসিন্দা। তারা দুজনে দীর্ঘদিন যাবৎ শেয়ারে গরুর ব্যবসা করে আসছিল। ব্যবসার জন্য ভিকটিম সাইফুল অপর দুই গরুর ব্যবসায়ী জনৈক হাসিম ও মোমেন এর নিকট হতে এক মাস পরে পরিশোধ করবে শর্তে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ধার করে এনে তাজুলকে দেয়। শর্ত মোতাবেক একমাস শেষে তাজুল এর নিকট ভিকটিম টাকা চাইলে সে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে এবং ঘোরাতে থাকে। হাসিম ও মোমেন তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করার কারনে ভিকটিম সাইফুলকে চাপ প্রয়োগ ও কটুক্তি করতে থাকে। ফলে ভিকটিম সাইফুল মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীতে ভিকটিম সাইফুল এলাকার স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় একটি গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে তাজুলের সাথে টাকা পরিশোধের বিষয়টি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তি করে নেয়। এতে শর্ত থাকে ১৫ দিনের মধ্যে তাজুল সাইফুলকে সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দিবে। চুক্তির স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর হওয়ার পর তাজুল ক্ষিপ্ত হয়ে শালিস থেকে উঠে যায় এবং সাইফুলকে দেখে নিবে বলে হুমকি প্রদান করে চলে যায়। পরবর্তীতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ সাইফুল ত্রিশা বাজারে একটি চায়ের দোকানে থাকাকালীন একটি ফোন পেয়ে উঠে চলে যায়। তারপর থেকে ভিকটিম সাইফুল এর পরিবার তার ফোন বন্ধ পায় এবং পরিবারের পরিচিত সকল জায়গায় খোজাখুজি করতে থাকে। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালে নোয়াদিয়া কান্দাপাড়া পঞ্চগ্রাম ঈদগাঁ মাঠে ভিকটিম সাইফুলের গলা কাটা মাথা বিচ্ছিন্ন করা লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাটি মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর র্যাবের গোয়েন্দা দল হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এবং চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার অন্যতম প্রধান আসামী জুনায়েদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম সাইফুল এর সাথে তাজুলের টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে মনোমালিন্যের কারণেই সাইফুলকে হত্যার করার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাইফুলকে হত্যা করে হত্যার দায় হাসিম ও মোমেন এর উপর চাপিয়ে দিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাজুল, জুনায়েদ, সোলাইমান, শাকিল ঈদগাঁ মাঠে অবস্থান করে। ভিকটিম সাইফুলকে ব্যবসার কথা বলে ফোন করে ঈদগাঁ মাঠে ডেকে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে সেখানে তাজুল ও সাইফুল কথা কাটাকাটি করতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে তাজুল সাইফুলের গলায় থাকা গামছা পেঁচিয়ে ধরে। সেই সাথে জোনায়েদ এবং শাকিল সাইফুলকে জাপটে ধরে। এতে করে সাইফুল অজ্ঞান হয়ে যায়। অজ্ঞানরত অবস্থায় ভিকটিম সাইফুলকে এই মামলার অন্যতম আসামি জুনায়েদের সহায়তায় তাজুল দা দিয়ে কুপিয়ে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং ঘটনা স্থল থেকে সবাই পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাজুল ইসলাম এর সাথে ঘটনায় সরাসরি জড়িত অন্যান্য আসামীদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাজুল এবং সোলাইমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তাজুলের স্বীকারোক্তি এবং সোলাইমান এর জবানবন্দীতে এই নৃশংস হত্যার অন্যতম সহযোগী জোনায়েদ এবং শাকিল এর নাম প্রকাশ পায়। ঘটনার পর থেকেই জোনায়েদ এবং শাকিল পলাতক থেকে যায়। র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জুনায়েদকে গতকাল সন্ধ্যায় গাজীপুর টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার আরেক পলাতক আসামী শাকিলকে গ্রেফতারের জন্য র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত জুনায়েদ এর বাবা-মা এলাকায় পিঠা বিক্রি করত। জুনায়েদ ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে বাবা মা এর সাথে পিঠা বিক্রির কাজে সহযোগিতা করত। পরবর্তীতে সে ২০১৯ সাল থেকে তার চাচাদের সাথে ছাগলের ব্যবসা শুরু করে। ছাগলের ব্যবসার সুবাদে আসামীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাইফুলকে হত্যার পর জুনায়েদ এলাকা ছেড়ে তার নানার বাড়ি ব্রাহ্মনবাড়িয়া এসে আত্মগোপনে থাকতে শুরু করে। সেখানে ১ মাস থাকার পর গাজীপুর এসে একটি গার্মেন্টেসে চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।