লে: কর্ণেল ডা: নাসির উদ্দিন আহমেদ।। সৃষ্টির শুরু থেকেই হাঁটছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষের এই হাঁটুর যেন বিরাম নেই। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ শিকারের প্রয়োজনে কিংবা খাবারের সন্ধানে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে হেঁটে বেড়াতো। যন্ত্র সভ্যতা মানুষকে দান করলো গতি।
হেঁটে পথ চলার প্রয়োজনীয়তা গেল কমে। আমরা এখন হাঁটাহাঁটি একেবারেই ভুলে যাচ্ছি। সজোরে গাড়ি হাঁকিয়ে পথ চলছি কিংবা রিকশায় চেপে ঘুরছি শহরময়। শহরে থেকে গ্রামের দিকে চোখ ফেরালে অবশ্য ভিন্ন চিত্র চোখে পড়বে। সেখানে মানুষ হাঁটছে। হেঁটে পথ চলার কারণে শহরবাসীদের তুলনায় গ্রামবাসীদের কিছু কিছু রোগও কম হয়ে থাকে। যেমন-হৃদরোগ, পাশাপাশি হাঁটার অভ্যাস সে গ্রামবাসীদেরকে এসব রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখছে তা সহজেই অনুমেয়।
হাঁটার বিষয়টি নিয়ে দুটি পৃথক গবেষণা চালানো হয়েছে ১৯৫০ সালে দুটি পৃথক স্থানে। বিস্ময়করভাবে একটি বিষয় গবেষণার ফলাফলে বেরিয়ে আসে- আর তা হলো হাঁটার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। প্রথম গবেষণাটি পরিচালিত হয় লন্ডনে। সেখানে বাস চালক এবং কন্ট্রাষ্টরদের মাঝে গবেষণায় দেখা যায় বাস চালকদের হৃদরোগের হার কন্ট্রাষ্টরদের তুলনায় বেশি। চালক অলসভাবে সারাক্ষণ বাসে বসে থাকে, হাঁটাহাঁটির ধারে কাছেও যায় না অথচ কন্ট্রাষ্টর প্রতিটি কাউন্টারে নেমে টিকেট চেক করে দ্রুতু হেঁটে কিংবা দৌড়ে এসে বাস ধরে ফলে তার হৃদরোগ কম হয়।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ডাক বিভাগের কেরানীর মাঝে গবেষণায় দেখা গেলো ডাক পিয়নদের হৃদরোগের হার একেবারেই কম অথচ কেরানীদের হৃদরোগের হার বেশি। ডাক বাহকেরা সারাদিনমান ঘুরে ঘুরে ডাক বিলি করে যায় আর কেরানী অফিসে বষে লিখনীর কাজ চালায়। একজন হাঁটে আর একজন প্রায় অলস সময় কাটায়। এই দুটি গবেষণার ফলাফল হাঁটার প্রয়োজনীয়তাকে উচ্চকিত করলো বিশেষ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে।
হৃদরোগগুলোর মাঝে করোনারী ধমনী সংক্রান্ত হৃদরোগেই মানুষ আক্রান্ত হয় বেশি। এ রোগে রক্তনালীর ভেতরের গাত্রে এক ধরনের শে^ত রক্তকণিকা, কোলেস্টেরল, পেশী কোষ, ফাইবার কোষ যুগপৎভাবে মিলেমিশে দীর্ঘ দিনের জটিল প্রক্রিয়ারে তৈরি করে প্লেক। ফলে রক্তবাহিকাগুলো সরু হয়ে যায়। রক্ত চলাচল বাঁধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কখনো কখনো এই প্লেক ছিড়ে যেতে পারে। তখন ঘটে বিষম বিপত্তি। অণুক্রিকা (রক্তের একটি কোষ) এসে জমতে থাকে ধমনীর গায়ে।
রক্ত জমাট বেঁধে তৈরি করে ক্ষুদ্র ক্ষদ্র থ্রম্বাস। এই ’থ্রম্বস’ (Thrombus ) গুলো সরু রক্তনালীর পথ আটকে দেয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে হৎপিন্ড এবং মস্তিস্কের কিছু অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ায় শুরু হয় তীব্র ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোক। নিয়মিত জোরকদমে এক ঘন্টা করে হাঁটলে এই সমস্ত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। হাঁটলে নতুন নতুন সরু রক্তজালিকা তৈরী হতে থাকে যা করোনারী ধমনী সংক্রান্ত হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় কয়েকগুণ।
শরীরের প্রতিটি কোষে ফুরফুরে জীবনদায়ী অক্সিজেন পৌঁছে দিতে রক্তজালিকা গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে।কোষকে প্রাণবন্ত রাখতে হাঁটতে হবে নিয়মিত। হাঁটলে রক্তচাপ কমে য়ায়, রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হয় এবং বন্ধু কোলেস্টেরল এইচডিএল বৃদ্ধি পায়, যার সবগুলোই হৃদরোগীর জন্য কল্যাণকর। এখানে বলে রাখা ভালো কোলেস্টেরলের মাঝে এক উপকারী বন্ধুভাবাপন্ন কোলেস্টেরল রয়েছে য়ার নাম এইচডিএল । আর শত্রু কোলেস্টেরল হলো এলডিএল।
এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় আর এইচডিইল কমিয়ে দেয় এই ঝুঁকি। হাঁটলে এলডিএল কমতে থাকে। যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্যে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। দেহের পেশীকোষে গ্লকোজ পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রয়োজন ইনসুলিন। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় ক্ষেত্রেই ইনসুলিন অকার্যকর থাকে। হাঁটলে ইনসুলিন সক্রিয় হয়ে উঠে আর দেহের প্রতি কোষে পৌঁছে যায় গ্লুকোজ। ফলে রক্তে কমে আসে চিনির মাত্রা। ডায় অর্থ দাঁড়ায় ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ।
সে জন্য খাদ্য তালিকায় রদবদল ও ঔষুধ গ্রহণের পাশাপাশি হাঁটতে হবে ডায়বেটিস রোগীদের। ডায়াবেটিস রোগীদের করোনারী সংক্রান্ত হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি বিধায় তাদের ক্ষেত্রে হাঁটার গুরুত্ব অপরিসীম। যারা মেদ কিংবা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তাদের জন্য হাঁটা উত্তম দাওয়াই। রসনাকে সংযত রাখার পাশাপাশি ঘাম ঝরিয়ে হাঁটতে না পারলে চর্বিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা দুঃসাধ্য। আর এ কথা কে না জানে যে মেদ ভুঁড়ি ডেকে আনে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য হৃদরোগের মতো ভয়ানক সব ব্যাধি। জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মরবিয়া ও মাইকেল কসটানজা দেখিয়েছেন মানুষ প্রতিদিন অন্তত একশত ক্যালরি অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করে।
প্রতিদিন পনেরো মিনিট জোর কদমে হাঁটলে কিন্ত এই ক্যালরি মোটেও খরচ হবে না। যদি ত্রিশ মিনিট জোর কদম কিংবা এক ঘন্টা ধীর কদমে কেউ হাঁটে তবে অতিরিক্ত গ্রহন করা এই ক্যালরি ক্ষয় হয়ে যাবে। তারা দেখিয়েছেন প্রতিদিন ত্রিশ মিনিট জোর কদমে হাঁটলে মাস শেষে দেড় পাউন্ড ওজন কমে যায়। এভাবে এক ঘন্টা করে হাঁটলে বছরে ওজন কমে ছত্রিশ পাউন্ড। সে জন্য ত্রিশ থেকেই সচেতন হোন। সময় করে বেরিয়ে পড়ুন রাস্তায়, ফুটপাতে অথবা পার্কে। ঝর্ণার মতো ছুটে চলুন, এক সময় দেখবেন ফুরফুরে হয়ে উঠছেন আপনিও।
হাঁটলে মানসিকভাবে নিজেকে ফুরফুরে মনে হয়। এই মনোভাব অনেক রোগকে হালকা করে দিতে পারে। নিজেকে ফড়িংয়ের মতো হালকা ভাবতে কার না ভালো লাগে। মানসিক চাপ কমে গেলে অনেক রোগের হাত তেকে নিজেকে রক্ষা করা সহজ হয়। দৈনন্দিন জীবনের অসংখ্য মানসিক পীড়ন থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি এনে দিতে পারে এই হাঁটার অভ্যাসটি। বন্ধুদের সাথে খোশ মেজাজে হাঁটতে থাকলে দেখবেন আপনার উপর চেপে থাকা মানসিক অভিঘাতের জগদ্দল পাথরটি এক সময় উড়ে গিয়েছে মুক্ত বাতাসে।
বিকেলের দিকে ঘন্টাখানেক হাঁটলে শরীরে ক্লান্তি এসে ভর করবে যা অনিদ্রার অভিশাপ থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। যারা ইনসোমনিয়া অর্থাৎ অনিন্দ্রয় ভুগছেন তারা বিকেলে হাঁটুন। ঘুমের আগে উষ্ণ পানিতে গোসল সেরে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করে বিছানায় গা এলিয়ে দিন। সুখ নিদ্রায় ভরে উঠবে আপনার শরীর আর মনের উঠোন। আজই চেষ্টা করুন। দেখবেন কী অনাবিল নিদ্রার আনন্দ।
হাঁটা সর্বোত্তম ব্যায়াম। হাঁটার জন্য আলাদা পয়সা খরচ করার দরকার নেই। এতে কোনো যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজন হয় না। কোনো হেলথ ক্লাবের সদস্য হয়ে মাসিক চাঁদা গোনার প্রয়োজনও এতে নেই। ভিন্ন ধরণের পোশাক আশাকের কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু একজোড়া জুৎসই কেডস হলেই চলে।
আজকাল (Aerobic) ব্যায়ামের কথা খুব বেশি করে শোনা যাচ্ছে। এই (Aerobic) কথারটির সোজাসাপটা মনে দাঁড়ায় অক্সিজেন সহযোগে। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষকে সজীব রাখার জন্য অক্সিজেনের প্রবাহ থাকা চাই। বাতাস থেকে আমরা ফুসফুসের সাহায্যে অক্সিজেন গ্রহণ করে রক্তে পৌঁছে দিই। রক্ত এই অক্সিজেন পৌঁছে দেয় সমস্ত কোষে। অক্সিজেনের অভাব ঘটলেই দেখা দেয় বিপত্তি। কিছু কিছু খোলাধুলায় যেমন-স্কোয়াশে হঠাৎ করে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় অক্সিজেন ঘাটতি, তৈরি হয় ল্যাকটিক এসিড, সৃষ্টি করে পেশিতে পেশিতে ব্যথা বেদনার। হঠাৎ করে খুব বেশি পরিমাণ দৌড়ালেও এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি না করে যে শরীরচর্চগুলো করা হয় সেগুলোই মানব দেহের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এর মাঝে রয়েছে হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতারকাটা কিংবা নৃত্য। আর এ সমস্ত শরীর চর্চার মাঝে বিচার করলে সহজেই বুঝা যাবে হাঁটাই হচ্ছে সর্বোত্তম।
সাইক্লিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। প্রতিবছর শুধু ইংল্যান্ডে নয় হাজার সাইক্লিস্ট দুর্ঘটনার শিকার হয় আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে সাইক্লিস্টের মর্মাস্তিক মৃত্যুর খরব পত্রিকার পাতায় এসেছে। তাছাড়া সকল মানুষের পক্ষে সাইক্লিং সম্ভবপর ব্যায়াম নয়।
সাঁতার কাটা অবশ্য হাঁটার বিকল্প হতে পারে। কিন্তু খোদ আমেরিকার মতো উন্নত দেশে শতকারা ১-২ ভাগ মানুষের সুইমিং পুলে গিয়ে সাঁতার কাটার মতো সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে সুইমিং পুলে গিয়ে আধা ঘন্টা সাঁতার কাটার মতো সুযোগ হতে গোনা শুটি কয়েক মানুষের রয়েছে। অবশ্য নদী নালা পুকুরে সাঁতার কাটার কথা ভিন্ন। কিন্ত এই সুযোগকে হাঁটার বিকল্প ভাবা মোটেও ঠিক হবে না। তাছাড়া শীতের মওসুমে এত সময় সাঁতার কাটার কথা চিন্তায় আনা মুসকিল আজকাল ফিটনেস নৃত্যের প্রচলন হচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়। এই নৃত্যকে হাঁটার বিকল্প ভাবা মোটেও ঠিক হবে না। বায়োমেকানিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে নৃত্যের সময় একজন মানুষের শরীরের চার-পাঁচ গুন বেশি ওজন সহকারে পায়ের পাতা মাটিতে আঘাত করে। জগিংয়ের সময় এই ওজন দাঁড়ায় তিন-চার গুন অথচ হাঁটার সময় মাত্র এক-দেঢ় গুন শরীরের ওজন পায়ের পাতার উপর আছড়ে পড়ে। এ কারণে নৃত্যের ফলে পায়ের পাতা, অস্তিসন্ধি কিংবা মেরুদন্ডের নিচের অংশে আঘাত আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে য়ায়। জগিংয়ের বেলায় প্রায় একই কথা প্রযোজ্য। বিশেষ করে মধ্য ত্রিশের পর জগিংয়ের চেয়ে হাঁটাই উত্তম। জগিং করলে হাঁটু সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা বেড়ে য়ায়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর জগিং এবং ফ্যাশনেবল ক্রিয়া ক্ষেত্রে আঘাতজনিত কারণে পঁয়তাল্লিশ হাজার অপারেশেন করতে হচ্ছে হাঁটু সন্ধিতে। আরেকটি নিরীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে আমেরিকায় যদি জগিং বন্ধ করে দেয়া হয় তবে শতকরা দশ ভাগ অর্থোপেডিক শল্য চিকিৎসক কর্মহীন হলে পড়বেন। জগিং এবং জোরে দৌড়ে চলার কারণে হাঁটু সন্ধির আঘাতের আশঙ্কা যেমন বেড়ে যায় পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে করোনারী ধমনী সংক্রান্ত রোগীদের হৎপিন্ড তাল মিলিয়ে উঠতে পারে না। ফলস্বরুপ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আমেরিকার একজন বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জর্জ কার্চ এই প্রবণতাকে আখ্যায়িত করেছেন ( Run to death) হিসেবে। সে জন্য একটা বয়সের পরে জগিং এবং দৌড়ের ব্যাপারে বেশি উৎসাহী না হয়ে হাঁটার দিকে মনোনিবেশ করাই নিরাপদ।
হাঁটতে গেলে দু,একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। নতুন নতুন জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটার সময় ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই পায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে ফেলেন যা খুবই মারাত্বক জটিলতা তৈরি করতে পারে। সে জন্য জুতা জোড়া যেন হয় সহনীয়, কোমল যেন পায়ের সাথে এটে থাকে ভালোভাবে। মহিলারা হাইহিল পরে হাঁটার চেষ্টা করবেন না। এতে শরীরে ভারসাম্য রক্ষা করা অনেক ক্ষেত্রে মুশকিল হথে পারে। তাছাড়া হঠাৎ পড়ে গিয়ে মারাত্বক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেজন্য জুতা পরে অথবা চটি পায়ে দিয়ে হাঁটুন।
যারা ইসকেমিক হৃদরোগে ভুগছেন তারা শুরুতেই খুব করে হাঁটতে যাবেন না। যে নির্দিষ্ঠ মাত্রা পর্যন্ত হাঁটলে বুকে ব্যথা শুরু হতে পারে তার চেয়ে খানিক কম দূরত্ব হাঁটুন। আস্তে আস্তে মাত্রা বাড়াতে থাকুন। দেখবেন এক সময় অনেক দূরত্ব অতিক্রম করলেও আর বুকে ব্যাথা হচ্ছে না। কেননা এখন অপনার হৃৎপিন্ডে নতুন রক্তজালিকা লকলকিয়ে বেড়ে উঠেছে যা ইসকেমিয়ার প্রবণতাকে হ্রাস করছে। হাঁটার জন্য সময় বের করুন। যদি সকালে না পারেন তো বিকেলে হাঁটুন, বিকেলে না পারলে তো সন্ধায়। রাতে হাঁটলেও অসুবিধা নেই। রাতে খাবার পর কিছু হাঁটা উত্তম। ইংরেজীতে একটি কথা আছে (after launch rest a while after walk a mile) এক মাইল হাঁটা নিয়ে অবশ্য মতবিরোধ রয়েছে। খাওয়ার মাইল খানেক হাঁটা হৃদরোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য খাওয়ার পর কিছু পথ হাঁটা যায়; অবশ্যই তা আয়েশে একেবারে জোর কদমে নয়।
মুক্ত বাতাসে প্রাণখুলে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা সুস্থ থাকার জন্য একান্ত জরুরি। অসম্ভব ব্যস্ত আমাদের এই কর্মজীবনের ভেতর থেকেই বের করে নিতে হবে সময়। প্রায়োজনবোধে অফিস পাড়ায় গাড়ির বদলে হেঁটে চলে আসুন। প্রতিদিন না পারলেও অস্তত সপ্তাহে দু-তিন দিন বের করুন হেঁটে পথ চলার জন্য নিজের বাজার হেঁটে গিয়ে সেরে ফেলুন। বিকেলে পার্কের খোলা ময়দানে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে হেঁটে বেড়িয়ে আসুন। দেখবেন শরির ও মন ফুর্তিতে নেচে উঠবে আপনাতেই। শরীরের উপর চেপে বসা ভারিক্কিভাব উড়ে যাবে কর্পূরের মতো। আর হৃদরোগ কিংবা মধুমেয় রোগ যদি ভর করে আপনার উপর কিংবা হয়ে পড়েন স্থুলকায় তবে অবশ্যই জীবনের জন্য সময় বের করুন। হাঁটুন।
লেখক: মেডিসিন স্পেশালিষ্ঠ ও এন্ডোক্রাইনোলজিষ্ট সিএমএইচ, ঢাকা।