দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ সওগাত নিয়ে এলো, জানান দিল ঈদ উল ফিতরের খুশির বারতা। ঈদ মানে আনন্দ। সবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে রয়েছে অপার সুখ । ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ঈদের আগের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি। অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে সচেষ্ট হই। রোজার প্রধান লক্ষ্য ত্যাগ ও সংযম। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর।
কিন্তু এই কল্যাণের মাঝে অকল্যাণকর খবর হলো, রমজানে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অধিক মুনাফা করা। এ মাসেও হত্যা, ছিনতাই ও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর পাশাপাশি মানুষ কষ্ট পেয়েছে যানজটে। ঈদে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে এবারও মানুষের ভোগান্তি হয়েছে।
রমজান সংযমের মাস হলেও অনেকে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। দরিদ্র স্বজন বা প্রতিবেশীর প্রতি অনেকে কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত থাকেন। এটি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী। ঈদ উদযাপনের সময় আমাদের এ কথাটিও মনে রাখতে হবে।
এবার ঈদে ৫ দিনের সরকারি ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। এতে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি যেন অচল বা স্থবির হয়ে না পড়ে, সরকারকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎসব-আনন্দে সংশ্লিষ্টরা যেন দায়িত্বের কথা ভুলে না যান।
ঈদ আসে সাম্যের দাওয়াত নিয়ে। অনেকে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাকে বড় করে দেখেন। এর মর্ম অনুধাবন করেন না। ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে আনন্দ ও সম্প্রীতির বড় অভাব। ঈদ উপলক্ষে রাজনৈতিক নেতারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এ দৃষ্টান্ত কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি তারা রাজনীতিতেও শুভেচ্ছা ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেন, তবে তা হবে সমগ্র জাতির জন্য আনন্দের সংবাদ। আর এই সংবাদই সুসংবাদ হয়ে আসুক আমাদের জাতীয় জীবনে এবং সম্প্রীতির স্বর্গ হোক আমাদের দেশ-এটাই প্রত্যাশা। সবাইকে ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।