মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সাথে সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং মিশরের বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক এখনো জোড়া লাগেনি। কূটনৈতিকভাবে, বিশেষ করে জনশক্তি রপ্তানির কারণে এই সংকটে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ দৃঢ়, অন্যদিকে কাতার ক্রমবর্ধমান জনশক্তির বাজার এবং জ্বালানী আমদানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় কাতার সংকটে পক্ষ অবলম্বন করার বাংলাদেশের ওপর চাপ আসতে পারে।
সম্প্রতি সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করায় শঙ্কা দানা বেঁধেছে কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশীদের। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে সেদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পরিবার।
কাতারের সাথে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশরের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণাটা এসেছে অনেকটা আকস্মিক। আর এই উদ্যোগের পেছনে মূল ভূমিকা যে সৌদি আরবের সেব্যাপারেও বিশ্লেষকরা নিশ্চিত। সৌদিদের সাথে কাতারের সম্পর্ক আগেও খারাপ হয়েছিল, কিন্তু এতটা কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় অনেকেই হতবাক হয়েছেন। প্রাথমিক মধ্যস্থতার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে, ফলে সমস্যা দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনাও বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সমস্যা নিয়ে সরকারকে বেশ সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই এগুতে হবে। সমস্যা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে সেক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকা সম্ভব হবে না। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কূটনৈতিকভাবে চাপ যদি আসে, তবে সেটি সৌদি আরবের পক্ষ থেকেই আসার সম্ভাবনা বেশি।
১৯৯১ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় সৌদি আরবে বিদেশী সৈন্যের উপস্থিতির ফলে সমালোচনা ঠেকাতে মুসলিম দেশগুলো থেকে সৈন্যদের নিয়েছিল সৌদি আরব। যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকেও সেনারা গিয়েছিল। যদিও মূল ভূমিকায় ছিল পশ্চিমা সেনাবাহিনী।
সেই যুদ্ধের সময় দ্বন্দ্বের জের ধরে ইয়েমেন এবং ফিলিস্তিনের মানুষদেরও ফেরত পাঠিয়েছিল সৌদি আরব।
পশ্চিমা হস্তক্ষেপ এড়াতে জর্ডানের বাদশাহ এবং সাবেক ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাতের মধ্যস্থতার চেষ্টা পছন্দ না হওয়ায় তাদের প্রতিও কঠোর ভূমিকা নিয়েছিল সৌদি আরব। ফিলিস্তিনী নাগরিকদের ফিরিয়ে দিয়েছিল, ইয়েমেনের লাখ-লাখ লোককে চলে যেতে হয়েছিল সৌদি আবর ছেড়ে। এখানে একটা কথা স্পষ্ট, “সৌদি যেটা চায় সেটাতে যদি কেউ বাধা দেয় বা তাদের মতের সাথে যদি না মেলে, তবে উল্টো ব্যবস্থা নিতে তারা কখনোই পিছপা হয় না”।
বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে কাতার-সৌদি দ্বন্দ্বে কোন অবস্থান না নেয়াটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। তাদের মতে, বাংলাদেশ বরং মধ্যস্থতার ভূমিকায় যেতে পারে। এছাড়া সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের উচিত হবে একটি বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা। যাতে করে সংঘাতপূর্ণ অবস্থায়ও বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে।