তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মিলনস্থল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর উপজেলায় শত বছরের ঐতিহ্যবহকারী ‘মাছের মেলা’ শুরু হয়েছে। অদ্য বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। প্রতি বছরই পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় এই মাছের মেলার।
করোনাভাইরাস ও ওমিক্রন সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় গেল দুই বছর মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে বৃহস্পতিবার থেকে বসতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা।
শুক্রবার বিকেল থেকে মাছের মেলায় এরই মধ্যে দেখা যায়, মাছের আড়ৎদাররা মাছ নিয়ে এসেছেন। মজুত করে রাখা হয়েছে ছোট-বড় নানা জাতের মাছ। আছে বাঘাইড়, বোয়াল, আইড়, চিতল, কাতলা, রুই ইত্যাদি।
মেলায় আসা মাছের আড়তের মধ্যে চাঁনপুর মৎস্য আড়তে ৭৬ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৭৬ হাজার টাকা। চাঁনপুর মৎস্য আড়তের আব্দুল আলীম জানান, ৫ হাত লম্বা এই ‘দানব’ মাছটি পদ্মা নদী থেকে শিকার হয়েছে।
মেলাকে কেন্দ্র করে মৎস্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত করছেন বড় বড় দোকান। নানা ধরনের গৃহস্থালি ও বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনার পুতুল, টাট্টু ঘোড়া নিয়েও বসেছেন অসংখ্য দোকানি।
অপরদিকে কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ আরও নানা জাতের বাসনকোসন ও আসবাবপত্র নিয়েও বসেছেন কিছু দোকানি। মেলায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামীকাল থেকে মেলায় ভিড় বাড়বে। মেলায় যাতে পূর্বের মতো কোন রূপ জুয়া ও অশ্লীলতা না হয় তার জন্য প্রশাসন নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে।
দোয়ারাবাজার থেকে মেলায় আগত শহিদুল ইসলাম নামে এক যুবক জানান, মেলার সৌন্দর্য ও সারাদেশ থেকে আগত মাছ দেখতে আসেন। যাবার সময় খেলনা ও মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যাবেন।
ইতিমধ্যে রাতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া মাছের মেলায় উপস্থিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে মাছের মেলার প্রচলন শুরু হয় শতাধিক বছর পূর্বে। ঐ এলাকায় প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে আয়োজন করা হয় ‘মাছের মেলা’ নামের এই মেলা। শুরুতে ওই মেলাটি সদর উপজেলার মনুমুখ এলাকায় হলেও পরবর্তীতে মেলাটি উপজেলার শেরপুরে স্থানান্তরিত হয়।
মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাওয়াদিঘি, হাইল হাওর ও মনু, ধলই, কুশিয়ারা নদীসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন হাওরের মাছের উপর নির্ভর করে প্রতিবছরই বসে এ মেলা। মৎসজীবিরা এই মেলায় মাছ বিক্রির জন্য ৫ থেকে ৬ মাস আগে থেকেই বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। এই মাছগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় পানিতেই বাঁচিয়ে তাজা রাখা হয়।