December 15, 2025 - 12:33 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeজাতীয়শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

spot_img

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর-আালশামস বাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে।

শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন হতে যাওয়া বাংলাদেশকে মেধাশূন্য ও দিশাহীন করে দেওয়াই ছিল এই নৃশংসতার মূল লক্ষ্য। গভীর শোক, বেদনা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি প্রতিবছর এই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের এক ভয়াবহ অধ্যায়। স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের ঠিক আগমুহূর্তে জাতির চিন্তা, বিবেক ও নেতৃত্বের ভিত্তিকে ভেঙে দিতে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চিন্তকরা বাসসের সঙ্গে আলাপে বলেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজন কখনোই ফুরিয়ে যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ১৪ ডিসেম্বর এলে জাতির সামনে এক গভীর বেদনাবিধুর স্মৃতি ফিরে আসে। স্বাধীনতার মাত্র দুই দিন আগে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার একটি কূটচাল।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ দেশের সচেতন ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করত। সে কারণেই মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে, ২৫ মার্চের কালরাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়। তবে ১৪ ডিসেম্বর ছিল সেই ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত ও সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ।

তিনি বলেন, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দে, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীসহ অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বকে জাতি হারিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরাই সমাজকে মুক্তি, প্রগতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য চিন্তা ও চেতনার খোরাক জোগান। তারাই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার চেতনার অনির্বাণ শিখা প্রজ্বলিত করে রাখেন। তাদের অনুপস্থিতিতে একটি রাষ্ট্র চিন্তায় ও মননে পঙ্গু হয়ে পড়ে। বাংলাদেশকে সেই পঙ্গুত্বে ঠেলে দিতেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের আগে রায়েরবাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পচাগলা ও বিকৃত দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। অনেককে শনাক্ত করা যায়নি, আবার অনেকের খোঁজ আজও মেলেনি। এই পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশের মতো ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বুদ্ধিজীবীরা যেন নিরাপদ পরিবেশে জ্ঞানচর্চা করতে পারেন এবং জাতিকে আলোর পথ দেখাতে পারেন।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, এ দেশে ‘বুদ্ধিজীবী’ শব্দটি ষাটের দশকে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে বিশেষভাবে পরিচিতি পায়। সে সময় শিক্ষিত সমাজের একটি অংশ প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত না হয়ে দূর থেকে মতামত প্রকাশ করতেন, যা নিয়ে সমালোচনাও ছিল। তবে ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল সেই সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে- এটি ছিল জাতির মেধাকে নির্মূল করার ভয়াবহ অপচেষ্টা।

তিনি বলেন, প্রকৃত বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতার পদলেহন করেন না; বরং ক্ষমতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্য উচ্চারণের সাহস রাখেন। সে কারণেই তারা শাসকগোষ্ঠীর কাছে হুমকি হয়ে ওঠেন। রায়ের বাজার ও জিগাতলার বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস তাই কেবল স্মরণের দিন নয়, বরং নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আত্মসমালোচনার দিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা শুধু অতীতের স্মৃতি নন; তারা আমাদের দৈনন্দিন চিন্তা ও মননের অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিচিহ্নগুলো শহীদদের উপস্থিতিকে জীবন্ত করে রাখে। প্রশ্ন হলো, আমরা কি তাদের আদর্শ ও উত্তরাধিকার যথাযথভাবে বহন করতে পারছি?

তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তন মানে কেবল ক্ষমতার হাতবদল নয়। একটি সমাজে ক্ষমতার সম্পর্ক, অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও মতপ্রকাশের পরিসর, সবই রাজনীতির অংশ। সময়ের সঙ্গে ‘বুদ্ধিজীবী’ শব্দটির ভাবার্থেও পরিবর্তন এসেছে। টকশো ও কলামনির্ভর আলোচনার আধিক্যে চিন্তার প্রকাশ বেড়েছে, তবে অনেক ক্ষেত্রে তার গভীরতা কমে গেছে। অথচ প্রকৃত বুদ্ধিজীবীর কাজ হলো সমাজকে নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি করা এবং দিকনির্দেশনা দেওয়া।

সাম্প্রতিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একাত্তরের স্মৃতি আমাদের সম্মিলিত চেতনায় এতটাই প্রোথিত যে সংকটের সময়ে তা ফিরে আসে। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কথাবার্তায় শহীদদের স্মরণ নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে। গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা ও ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য।

বিশিষ্টজনেরা একমত যে, সময় ও প্রেক্ষাপট বদলালেও সমাজকে সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার পথে পরিচালিত করতে বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না।

একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জাতিকে বারবার আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন—আজ, আগামীতেও।
সূত্র-বাসস।

আরও পড়ুন:

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

ওসমান হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত : মেডিকেল বোর্ড

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ মো. ওসমান...

এমবিবিএস ভর্তির পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবার পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রোববার...

হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে: ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা...

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৩৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে...

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়া হবে। এই প্রটোকলে রাজনৈতিক...

সূচকের পতনে লেনদেন শেষ

পুঁজিবাজার ডেস্ক: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার...

এন্টারপ্রাইজ কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাল সল্যুশনে পিটিসি-এক্সেনটেকের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি

কর্পোরেট ডেস্ক: পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসি)-এর সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এক্সেনটেক পিএলসি। করপোরেট সার্ভিস, সিম-ভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ সল্যুশন এবং ডিজিটাল সক্ষমতা...

গ্রাহক সন্তুষ্টির প্রত্যয় নিয়ে দেশের ১৬ অঞ্চলে ইউসিবির টাউনহল

কর্পোরেট ডেস্ক: একই দিনে, একই সময়—দেশের ১৬টি অঞ্চলে একসাথে টাউনহল। কোথাও ব্যাংকের চেয়ারম্যান, কোথাও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোথাও এএমডি, ডিমডি কিংবা সিনিয়র কর্মকর্তারা। পুরো দেশের...