সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি: স্কুল কলেজসহ লক্ষ লক্ষ প্রতিষ্ঠান এমন কী শৌচাগারেরও নামকরণ করা হয়েছিল, সেসব নাম জনগণ মুছে ফেলে দিয়েছে, এটা ইতিহাসের বিচার বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নরসিংদী পাঁচদোনায় ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা সড়কটি বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) এর নামের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আজকে ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা সড়কটি বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) এর নামে নামকরণ করা হয়েছে, এটাই হচ্ছে বিচার এবং এভাবেই আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে নিয়ে আসব।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, আজকে সবাই বলেন এ সরকার কী করল এতদিন, এই যে অপকর্মগুলো-সাংস্কৃতিক অপকর্ম, রাজনৈতিক অপকর্ম, অর্থনৈতিক অপকর্ম, এগুলো শুধরাতেই আমাদের সময় লেগেছে বেশি। এভাবে সব জায়গায় রাজনৈতিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে অনিয়ম করা হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজের এলাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ করেছেন, সেখানে টেম্পু ছাড়া কিছুই চলে না। এভাবে যেসব অপচয়- অপব্যয়-অনাচার হয়েছে এগুলো আমরা বন্ধ করব।
উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা একটি সুন্দর নির্বাচন করন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করন, যার যে দলই হউক, যারাই বিজয়ী হন আমরা তাদের পেছনে দাড়াব। কিন্তু কাউকে আপনারা সে সুযোগ দিবেন না, যারা এ প্রক্রিয়াটাকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে, বিকৃত করতে পারে। আগের মত ভোট কেন্দ্র দখল করতে পারে, পোলিং এজেন্টদের বের করে দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারক ই-আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভাজন লালন করে দীর্ঘস্থায়ী করতে চাই না। এভাবে পরস্পরের মধ্যে লেগে থাকলে পিছনেই টানতে থাকবে, মুক্তি মিলবে না। ঐক্যবদ্ধ হলেই কালো ছায়া মুক্ত হওয়া যাবে। এমনও মুক্তিযোদ্ধা আছেন যাদের মায়েরই বিয়ে হয়নি, তারাও মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় আছেন। আদালতে বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে, আশা করি আদালতের রায়ের মধ্যদিয়ে সংকট নিরসন হবে।
এসময় উপদেষ্টাদ্বয় বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) এর কবরে গিয়ে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন নরসিংদী কর্তৃক পাঁচদোনা স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ (কে.জি) গুপ্ত স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে আয়োজিত নামকরণের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারক ই আজম বীর প্রতীক, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
অন্যান্যের মধ্যে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, পুলিশ সুপার মো: আব্দুল্লাহ আল ফারক, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেনসহ বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) এর পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও সরকারি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর অফিসার ছিলেন। তিনি ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ ছুটিতে নরসিংদীতে থাকাকালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেন। ৯ ও ১০ এপ্রিল ইপিআরের সাথে মিলে বাগবাড়ি-পালবাড়ি- পাঁচদোনায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলেন। ছাত্র যুবকদের সংগঠিত করে নেহাবকে কেন্দ্র করে এ সড়কের দুই পাশের জনপদে মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই খাঁটি এলাকা থেকে পাঁচদোনা মোড়সহ অসংখ্য মুখোমুখি যুদ্ধ ও গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করেন। তাঁর অসম সাহসী বীরত্বের কারণে মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর থেকে তাঁকে চার থানা (নরসিংদী, শিবপুর, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার) নিয়ে গঠিত গেরিলা ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাঁর বিশাল বাহিনী এই কমান্ড এলাকার বাইরে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও যুদ্ধ পরিচালনা করে। তাঁর বীরত্বের কথা দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কিংবদন্তি বীরের খ্যাতি লাভ করেন।
সদ্য স্বাধীন দেশে তাঁর এই আকাশচুম্বি খ্যাতি শাসক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ঈর্ষার কারণ হয়। তাদের ষড়যন্ত্রে তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আড়াইহাজার উপজেলার পুরিন্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।


