সাইফুল ইসলাম তানভীর, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ): পদ্মার ভাঙনে আজ দিশেহারা মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। তাদের একটাই আর্তনাদ “পদ্মা ভাঙন থামাও, বাঁচাও আমাদের জীবন ও আশ্রয়।” হরিরামপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল লেছড়াাগঞ্জ, সুতালড়ি ও আজিমনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ইতোমধ্যে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যতটুকু জায়গা টিকে ছিল, সেগুলোর বড় অংশও আজ ভাঙনের মুখে। প্রতিদিনই নদীর পেটে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও জনপদ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এখানকার হাজারো মানুষ। নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে শতাধিক পরিবার।
রবিবার (১৭ আগস্ট) ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মার তীব্র ভাঙনের কারণে বিশেষ করে লেছড়াাগঞ্জ ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এ অবস্থায় ভিটেমাটি হারিয়ে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার বাধ্য হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র সরে যাচ্ছে। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন, কেউবা খোলা জায়গায় অস্থায়ী ঘর বেঁধে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
লেছড়াাগঞ্জ ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল গাজী জানান, “আমাদের শেষ সম্বল, বাপ-দাদার ভিটেমাটিটুকুও পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। এখন আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমরা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।” আমাদের চরাঞ্চল বাসীর একটাই দাবি, অবিলম্বে ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই। তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেন জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। নয়তো অচিরেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চল।
একই এলাকার নদীর পাড়ের বাসিন্দা লিপি আক্তার জানান, আমরা কোনো রিলিফ চাই না, ত্রাণ চাই না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, আমগো যা আছে, এ টুকু জানি আর গাঙ্গে না যায়, তার জন্য আমরা স্থায়ী একটা বাঁধ চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী আব্দুল হান্নান মৃধা বলেন, “একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান পাইনি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। আমরাও চেষ্টা করছি অসহায় মানুষগুলোর পাশে থাকার।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনূর আক্তার বলেন, “ভাঙনের বিষয়টি আমি অবগত আছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, শিগগিরই ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।


