সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ১৫ দিনে দেড় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও প্রায় দুইশ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে আরও হাজারো পরিবার, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ আবাদি জমি। জিওব্যাগ ফেলার পরও ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কাজিপুর উপজেলার মেঘাই পয়েন্টে যমুনার পানি ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে জেলা সদরের হার্ড পয়েন্টে পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ০৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, মনসুর নগর ও চরগিরিশ ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কোথাও ভাঙন দ্রুত, কোথাও ধীর গতিতে হলেও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। পানিবৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিবছর বর্ষায় ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। শ্রীপুর ও ফুলজোড় গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সামান্য পানিবৃদ্ধিতেই ভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বিঘা জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের রাজবাড়ী গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, “এ বছরসহ জীবনে ১২ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। আর সহ্য করতে পারছি না।” স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবলু মিয়া জানান, তার ওয়ার্ডে ৬০-৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি মাত্র দুই সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, তবে সরকারি কোনো সহায়তা মেলেনি।
কাজিপুর উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুন্টু জানান, খাসরাজবাড়ী এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে গোটা এলাকায় জিওব্যাগ ফেলতে হবে।
খাসরাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম বলেন, “আমার ইউনিয়নে শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হাইস্কুল ও মসজিদ ভাঙনের মুখে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।”
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।


