অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার (২ জুন) বেলা ৩টার দিকে জাতির উদ্দেশে বাজেট পড়া শুরু করেন তিনি। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
এদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চিনি-সয়াবিন তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য ছাড়াও কমবে ক্রিকেট ব্যাটের দাম। কমছে ঋণপত্রে উৎসে কর।
বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে এক শতাংশ থেকে .০৫ করা হয়েছে উৎসে কর।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর রাজস্ব আদায়ে কিংবা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে বড় কোনো প্রভাব রাখে না। তবুও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই উৎসে করের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে উৎসে কর বা সোর্স ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। যা করা হয়েছে .০৫।
এতে করে দাম কমে যাবে- ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, মোটা আটা, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফলের। সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। যা সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির হবে।
এছাড়া আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বলপয়েন্ট কলমের ওপর সব ধরনের ভ্যাট ও শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত সব ধরনের বলপয়েন্ট কলমের দাম কমতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬২%। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।
এবারের বাজেট উপস্থাপনে সংসদ না থাকায় কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে, আর সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো একদিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।


