September 20, 2024 - 3:36 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeআইন-আদালতঅনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন হিমু, প্রেমিকের সামনেই ফাঁস নেন

অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন হিমু, প্রেমিকের সামনেই ফাঁস নেন

spot_img

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় তার প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়া র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তার সামনেই হিমু গলায় ফাঁস নিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব জানায়, অভিনেত্রী হিমু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। গত ৪ মাসে প্রায় ২১ লাখ টাকাসহ ২-৩ বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খুইয়েছেন তিনি। এর আগেও প্রেমিক জিয়াকে ৩/৪ বার আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন অভিনেত্রী।

খন্দকার আল মঈন জানান, হিমুর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল জিয়ার। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাড়বিতণ্ডা হতো। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হিমু বলেছিলেন আত্মহত্যা করবেন। তবে জিয়া বিষয়টি পাত্তা দেননি। কারণ হিমু আগেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবেন বলে জানালেও পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি সত্যি সত্যি জিয়ার সামনেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় জিয়া হিমুর রুমেই খাটে বসা ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তিনি হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসময় জিয়া পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। পরবর্তী সময়ে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে হিমুকে নিচে নামান। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

র‌্যাব জানায়, হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় জিয়াকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাজধানীর বংশাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিয়া জানান, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়ার বিয়ে হয়েছিল এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্কের সুবাদে জিয়ার সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু আর জিয়ার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। হিমুর ২০০০ সালে বিয়ে হয় ও ২০০৫ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরে তৌফিক নামে একজনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে ২০১৭-১৮ সালে তৌফিক সুইসাইড করেন। এরপর হিমু মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েন। এরপর থেকেই জিয়ার সঙ্গে হিমুর সম্পর্ক হয়। ২০২০ সালে জিয়া অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন। এরমধ্যে গত ৪ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে জিয়া ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাড়বিতণ্ডা হতো। এছাড়া গত ২/৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছে বলে জিয়াউদ্দিন জানায়। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো।

জিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩ টায় জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরবর্তী সময়ে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়ার মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করেন। হিমু রুমের বাহিরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢোকেন। রুমের সিলিং ফ্যান ঝোলানোর হুকে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে তাকে হুমকি দেন।

জিয়াউদ্দিন র‌্যাবকে জানান, হিমু আগেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে জানালেও পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করেননি। এবারও আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জানালে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। কিন্ত কিছুক্ষণ পর দেখেন হিমু সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তখন হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসময় জিয়া পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। পরবর্তী সময়ে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামান।

জিয়া, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক সুইসাইড কেইস বলে পুলিশ ডাকার কথা যখন বলেন, তখনই হিমুর দুুটি মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান জিয়া।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তার উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেন। এরপর মোবাইল ২টি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিহির মেকআপম্যান হিসেবে হিমুর বাসাতেই থাকতেন। ২০১৮ সালের ২২ মে অভিনেত্রী তাজিনকেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাজিন পরে মারা যান। আমাদের গোয়েন্দারা মিহিরের বিষয়ে কাজ করছে। যেহেতু মামলায় আসামি করা হয়েছে উরফি জিয়াকে, তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে, মিহির কতটা এ ঘটনা সম্পর্কে জানতেন। এ ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।।

ঘটনার সময় জিয়া হিমুর রুমেই খাটে বসা ছিলেন বলে জানিয়েছেন। এর আগে ৩-৪ বার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে এবার পাত্তা দেননি জিয়া। এরমধ্যেই ‘আমি কি মরতে পারি না, দেখ পারি কি না’ বলে হিমু দড়িতে ঝুলে পড়েন। জিয়া ও হিমুর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসেজ চালাচালি পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, হুমায়ারা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম নাট্য জগতে প্রবেশ করেন। ফ্রেঞ্চ নামক নাট্য দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেন।

২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে হুমায়রা হিমুর অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রের গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিল।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ