সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় আলোচিত ‘আয়নাঘর’ কাণ্ডে অবশেষে সেই ব্যক্তিগত বাড়ির মালিক সুমন শেখ (২৩) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এর বিচারক আলমগীর হোসেন তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
সুমন শেখ রায়গঞ্জ উপজেলার সোনারাম মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ও জহুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি আলোচিত সেই ‘আয়নাঘরের’ মালিক।
সিরাজগঞ্জ ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক রতন জানান, সোমবার রাতে সদর উপজেলার বহুলী বাজার এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জবানবন্দি রেকর্ড করার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এসআই নাজমুল হক আরও জানান, সুমন তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন—পল্লী চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাত তাদের বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়ে দুটি কক্ষ তৈরি করেন। সেখানেই দুইজন নারী ও পুরুষকে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হয়। সুমন নিজেই তাদের খাবার সরবরাহ করতেন এবং আরাফাতসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২-৩ জন সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
উল্লেখ্য, রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের পূর্ব পাইকড়া গ্রামের আব্দুল জুব্বার (৭৫) ও লক্ষ্মী বিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের শিল্পী বেগম (৪৮) সুমনের বাড়ির সেই আয়নাঘরে দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন। ১ মে গভীর রাতে তারা নিজেদের চেষ্টায় তৈরি করা একটি সুরঙ্গ পথ দিয়ে পালিয়ে আসেন। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আব্দুল জুব্বারকে গত বছরের ৮ নভেম্বর এবং শিল্পী বেগমকে ১২ ডিসেম্বর অপহরণ করা হয়।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী আব্দুল জুব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম এবং শিল্পী বেগমের স্বামী মনসুর আলী বাদী হয়ে আলাদা দুটি অপহরণ ও নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি পল্লী চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাতকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এটি শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং সমাজের অন্ধকার দিকগুলোর একটি ভয়ংকর উদাহরণ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও আদালতের কার্যক্রমে আশা করা যায়, অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।


