তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন চা-বাগানে দীর্ঘ অনাবৃষ্টির ফলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খরার কারণে চা-গাছের নতুন কুঁড়ি আসছে না, শুকিয়ে যাচ্ছে অনেক চারা ও পুরাতন গাছ। পাশাপাশি পানির সংকটের কারণে চাহিদামতো সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, যা নতুন প্লান্টেশনকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ২২টি চা-বাগানের অনেক টিলায় তীব্র খরার প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘ তিন-চার মাস ধরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না থাকায় নতুন গাছের ৩০ শতাংশ ও পুরাতন গাছের ১০ শতাংশ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। পানির উৎস শুকিয়ে যাওয়ায় প্লান্টেশন এলাকায় সেচের ব্যবস্থা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
কমলগঞ্জ ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) মাধবপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক দিপন কুমার সিংহ জানান, “গত বছরের নভেম্বর মাসে সামান্য বৃষ্টি হলেও এরপর থেকে বৃষ্টি হয়নি। এখন চা উত্তোলনের মৌসুম, কিন্তু খরার কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে পাতা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।”
বাংলাদেশ চা সংসদের কর্মকর্তারা জানান, চা-গাছ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পানির অভাবের কারণে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে উৎপাদন ভাটার পাশাপাশি রপ্তানিতেও এর প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, “বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বর্তমানে উৎপাদন কার্যত বন্ধ। কিছু কিছু বাগানে পাতা চয়ন শুরু হলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। উৎপাদন খরচের তুলনায় চা বিক্রির দাম কম হওয়ায় শিল্পটিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।”
বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান ও জেমস ফিনলে চা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, “চলতি বছর গ্রীষ্মকালে ৩০ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা চা-গাছের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল। পাশাপাশি সার, সেচ ও কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যয় বাড়ার ফলে শিল্পটি চাপে মুখে পড়েছে।”
চা-বাগানের শ্রমিকদের আন্দোলন, বকেয়া বেতনের দাবি এবং অনাবৃষ্টির কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বড় ধরনের বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চা-বাগানের ছায়াদানকারী গাছ সংরক্ষণ এবং পানি সংকট মোকাবিলায় খাল ও জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। নয়তো সম্ভাবনাময় চা শিল্পকেও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।