আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০২৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল এবং তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে শক্তিশালী যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছিল, সে সম্পর্কে ভারত আগেই অবগত ছিল বলে দাবি করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে এ ব্যাপারে ভারত কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারেনি।
শনিবার (২২ মার্চ) পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান তিনি। এক প্রতিবেদনে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এ তথ্য জানায়।
জয়শঙ্কর দাবি করেন, ভারত খুব বেশি কিছু করার মতো অবস্থানে ছিল না। কারণ তাদের কাছে শেখ হাসিনার উপর প্রয়োজনীয় প্রভাবের অভাব ছিল। তারা হাসিনাকে শুধুমাত্র ‘পরামর্শ’ দিতে পারতেন।
কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জয়শঙ্কর সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা)-এর ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা করেন। জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সার্ক আলোচনার টেবিলের বাইরে নয় এবং এটিকে স্থগিত রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে সার্ককে পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে সার্ক অকেজো হয়ে রয়েছে। ইসলামাবাদে ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০১৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের উরিতে একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর ভারত তাদের অংশগ্রহণ বাতিল করে দেওয়ায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। তারপর থেকে ভারত বিমসটেক (বঙ্গোপসাগরীয় বহু-ক্ষেত্রীয় প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য উদ্যোগ) সহযোগিতাকে সমর্থন করে আসছে।
অবশ্য সম্প্রতি জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সার্ককে পুনরুজ্জীবনের জন্য উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটি জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে ‘খোলামেলা’ আলোচনা করতে বৈঠকে বসেছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান এতে প্রাধান্য পায়।
জয়শঙ্কর জানান, ভারত বাংলাদেশের ভেতরের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক বক্তব্যের উল্লেখ করেন। জাতিসংঘ তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিল যে, যদি তারা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়, তাহলে তাদের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেও শেখ হাসিনাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ায় ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারত এরই মধ্যে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রিকে ঢাকায় পাঠায়।
তবে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক (বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীরব।
এস. জয়শঙ্কর আলোচনায় উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ‘বহিরাগত শক্তির’ ভূমিকা রয়েছে এবং চীনকে তিনি ‘প্রতিপক্ষ’ নয়, বরং ‘প্রতিযোগী’ হিসেবে দেখেন।
এ ছাড়াও দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) নিয়েও আলোচনা করেন জয়শঙ্কর। ২০১৪ সালের পর থেকে সংস্থাটির কোনো শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।
এরপর ২০১৬ সালে পাকিস্তানে নির্ধারিত ১৯তম সার্ক সম্মেলনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। কারণ ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর, উরিতে ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় হামলা করা হয়। এরপর থেকে ভারত বিমসটেককে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মূলত, এই কারণে সার্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।