অনলাইন ডেস্ক : রমজান মাসে অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। কারণ রমজান মাসে দিনের বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। তাই এ সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কিছুটা কষ্টকর। কারণ পুরো মাসজুড়ে আলাদা একটি খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয়। রমজান মাসে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্য ও পুষ্টি।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারদাবার সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল হতে হবে, রমজানের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগীই নিশ্চিন্তে রোজা রাখতে পারবেন।
একেকজন ডায়াবেটিস রোগী সমস্যা একেক রকম, মানে স্বতন্ত্র। তাই রোজায় রক্তের গ্লুকোজ মান গ্লাকোমিটারে চেক করে নেবেন। যারা ইনসুলিন নেন, নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকেন, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু বাড়তি ঝুঁকি তো থাকেই। এগুলোর মধ্যে আছে—রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া, গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, পানিশূন্যতা ও রক্ত জমাটবাঁধা।
যারা রোজা রাখেন এমন ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রমজানে দেহের ওজন বজায় রাখেন, আবার ২০-২৫ শতাংশ ওজন অর্জন করেন বা হারান। রোজার মাসে ইফতারে অতিভোজন, প্রচুর শর্করা ও তেল-চর্বি খাবার না খাওয়া উচিত। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যসচেতন হওয়া ছাড়া কোনা উপায় নাই।
খাদ্যের পুষ্টিমান ঠিক রাখতে হবে আগের সময়গুলোর মতোই। দেহের স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করবনে। ইফতারি-সাহরিতে সহজপাচ্য খাবার খাবেন। প্রচুর পানি ও তরল খেতে হবে। খুব বেশি কঠোর শ্রম বা ব্যায়াম করতে যাবেন না। অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। বরং তারাবিহ আদায় করুন, এতে নামাযও আদায় করা হবে, ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে। রমজানে অতিভোজন বা স্বল্পভোজন থেকে বিরত থাকবেন। এবং সাহরিতে কোনো অবস্থাতেই না খেয়ে বা সামান্য কিছু খেয়ে রোজা রাখবেন না।
ইফতার ও সাহরিতে অতিভোজন, মিষ্টি বা তেল-চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা মেটাতে ভাত, রুটি, শাকসবজি, ফল, ডাল এবং মাছ-মাংস পরিমিত পরিমাণে খান। ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও তরল পান করুন।
শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। কঠোর ব্যায়াম বা শ্রম এড়িয়ে হালকা হাঁটাহাঁটি বা তারাবির নামাজকে ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। সাহরি কখনো বাদ দেওয়া যাবে না। রোজার শক্তি ধরে রাখতে সাহরিতে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া আবশ্যক।
যেসব রোগীর ডায়াবেটিসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের অনুমোদন নেওয়া উচিত। কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।