অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক: আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন থেকেই ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এ অভিযানে ইফতারি পণ্যের পাশাপাশি শিশু খাদ্য, ফলমূল এবং কসমেটিকস অর্থাৎ প্রসাধনী পণ্যেরও মান পরীক্ষা করে দেখবে বিএসটিআই।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এই অভিযানে রাজধানীতে প্রতিদিন ৩টি এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১টি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।
শিল্প উপদেষ্টা বলেন, বিএসটিআই গত কিছুদিনে খোলা বাজার থেকে ইফতার ও সেহরির ৭৩৭টি নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৫৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হলে সেখান থেকে ৪৭টি নিম্নমানের পণ্য পাওয়া গেছে। এসব মানহীন পণ্যের তালিকায় আছে প্রাণিজ ঘি, ফ্রুটস ড্রিংক, লবণ, সরিষার তেল, মুড়ি, লাচ্ছা সেমাই ও মসলা।
তিনি আরও বলেন, গত চার মাসে ৪৭১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। এতে ৪২৮টি মামলা হয়েছে এবং তিনজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সিলগালা করা হয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ওজনে কারচুপির কারণে ৩৮২টি কোর্ট পরিচালনা করে ৬১৫টি মামলা করা হয়। যেখানে জরিমানা করা হয় ২ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩৯২টি পেট্রোল পাম্পের ইউনিট সিলগালা করা হয়।
অভিযানটি দেশের ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন শিল্প উপদেষ্টা।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ১ মার্চ বা ২ মার্চ পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ার কথা। এ উপলক্ষে আরও এক মাস আগে থেকেই বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং এর আওতায় পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল প্রতিরোধ এবং পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রােধকল্পে চলমান মােবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রমে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রমজানে ঢাকা মহানগরীতে বিএসটিআইয়ের নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও এপিবিএন-এর সহায়তায় বন্ধর দিনসহ প্রতিদিন ৩টি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথা র্যাব এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে মােবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযযাগিতায় বিএসটিআইয়ের সব বিভাগীয়, জেলা ও আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রতিদিন একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মােবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি দেশব্যাপী বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্স টিমের অভিযান ও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
এসময় বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে জনগণ যাতে মানসম্মত পণ্য নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় ও সংগ্রহ করতে পার সে লক্ষ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এছাড়া রােজার মাসে আকস্মিকভাবে পরিচালিত অভিযানগুলোতে বিশেষ করে রােজাদাররা সচরাচর যে সব খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে থাকেন ফুট ড্রিংকস, ফুট সিরাপ, মুড়ি, খেজুর, সফট ড্রিংকস পাউডার, কা্বোনেটেড বেভারেজ, ভাোজ্যতেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডুলস, ইনস্ট্যান্ট নুড়ুলস, লাচ্ছা সেমাই, পানি ইফতার সামগ্রীর বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ধরনের পণ্যের বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা যেমন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এসব অভিযানে অংশ নেবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌসসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।