চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব ক’টি একযোগে বন্ধ রেখে শিক্ষকরা মিলনমেলা ও বনভোজনের করেছে। ওই মিলনমেলার আয়োজন করে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা। ফলে গতকাল সোমবার বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস হয়নি।
সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বদরগঞ্জ এলাকায় আক্কাস লেকভিউতে দিনভর আয়োজনে রাজনীতি দলেন নেতারা এ মিলনমেলায় অংশ নেন। এছাড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, জেলা একাউন্টন্স অফিসের সব কর্মকর্তা কমচারী এতে দাওয়াত পেলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন যোগ দেননি। তবে, পিকনিকের চাঁদা দিলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি পিকনিকের রান্না করা বাহারী খাবার। এ ঘটনায় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। একই সাথে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষাকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, খেজুরা ক্লাস্টার সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন বনভোজন সফল করার লক্ষ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার ক্লাস্টারের সকল প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে সবর্শেষ প্রস্তুতি সভা করেন। ওই সভা থেকে বনভোজন ও মিলনমেলার জন্য শিক্ষকদের জনপ্রতি ৫শ’ টাকা চাঁদা নির্ধারিত করেন। যারা চাঁদার টাকা পরিশোধ করে নাই তা পরিশোধের তাগিদ দেন। কোনো শিক্ষক বনভোজনে যেতে না চাইলে তাকেও চাঁদা দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের জন্য সোমবার সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যাবেনা তা বললে হবে না।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বনভোজনে যেতে না চাইলেও রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, ফার্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফ উদ্দিন ও মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ওয়াহেদ স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টাকা তুলেছেন।
সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের একজন শিক্ষকা বলেন, সমিতির নেতারা বনভোজনের নামে ৫০০ টাকা টাকা চাঁদা তুলছেন। বনভোজনে শিক্ষকদের যাওয়ার জন্য কোন যানবহনের ব্যবস্থা রাখেনি। ১৫ কিলোমিটার পথ নিজ ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাই আমার মত অনেকেই চাঁদা দিয়েও বনভোজনে অংশ নেইনি।
বনভোজন সম্পর্কে কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এবার এখনও সব শিক্ষাথী বই পাইনি। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। রবিবার খেলাধুলার কারণে ক্লাস হয়নি। সোমবার বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজন করেছে শিক্ষকরা। মঙ্গলবারও সরকারি ছুটি। এমনিতেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর এভাবে ছুটি দিয়ে বনভোজন করা ঠিক হয়নি। অনুষ্ঠানটি যেকোনো ছুটির দিনে করা উচিত ছিল।
বনভোজনে অংশ নেয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, আগে কখনোই বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বনভোজন আয়োজন হয়নি। বনভোজনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। কিন্ত আয়োজনে ত্রুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক খাবার পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুস সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁদের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন বলেন, শিক্ষকরা পিকনিকে যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন। পরে সবকিছু বিবেচনা করে ছুটি বাতিল করা হলে শিক্ষকরা তাদের বিদ্যালয়ে যায় এবং ক্লাস শুরু করে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। একসাথে সবগুলো শিক্ষকদের ছুটি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকদের পিকনিক করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি আমি পড়ে জেনেছি। এ ঘটনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। একই সাথে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।


