অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : চলতি বছরেই বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পাকিস্তানে ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তিনি বলেন, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি আকাশপথে যোগাযোগে দুই দেশের সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। চলতি বছরেই সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। এতে এ দেশের ব্যবসায়ীরা মধ্যপ্রাচ্য ও সেন্ট্রাল এশিয়ায় রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে পাকিস্তানকে করিডোর হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা সফররত পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ আহমেদ মারুফ বলেন, আগে বাংলাদেশি এয়ারলাইনস ফ্লাইট চালু করলো নাকি পাকিস্তান এয়ারলাইনস চালু করলো, সেটি কোনো বিষয় না। আমরা দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাই।
এ সময় দ্য ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে বিপুল বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে কৃষি, ঔষধ, চামড়া, মেশিনারি, কেমিকেল, আইসিটি খাতে দু’দেশের এক সঙ্গে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগের সুবিধাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
সভায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও কৃষি, বস্ত্র, ঔষধ, আইসিটিসহ সম্ভাবনাময় অনেক খাত এখনও অনাবিষ্কৃত থেকে গেছে। যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।
আতিফ ইকরাম শেখ আরো বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে পাকিস্তান অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তবে এখন থেকে আমরা বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। পর্যটনসহ জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয়ক বাণিজ্য আরও বাড়বে।’
বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাকে (ওআইসি) কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে এ সময় তিনি আরও বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্বালানি, শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবন প্রভৃতি খাতে দুই দেশের নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট, ওষুধ, চা, তৈরি পোশাক আমদানি করে পাকিস্তান। রপ্তানি বাড়াতে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চামড়া, টেক্সটাইল, ওষুধ, সিরামিক শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে পাকিস্তান। দুদেশের অর্থনীতির স্বার্থেই ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের নতুন নতুন সুযোগ খুঁজতে হবে।’
এফবিসিসিআই প্রশাসক বলেন, এফবিসিসিআই এবং এফপিসিসিআই সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, বিটুবি মিটিংসহ সিঙ্গেল কান্ট্রি ট্রেড ফেয়ার আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারে।
সভা শেষে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল গঠনে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেড়েছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ। এরই মধ্যে করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলও শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর ঘোষণা এলো।