স্পোর্টস ডেস্ক: অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।
তামিম ইকবাল বলেন, অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর সামনে, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক। এটা অবশ্য আগেও চাইনি। চাইনি বলেই অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদিও অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় মিডিয়ায় এসেছে, আমিই নাকি ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বিসিবির কোনো ধরনের চুক্তিতে যে নেই, এক বছরের বেশি সময় আগে যে নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তাকে পরিকল্পনায় রাখা বা তাকে নিয়ে আলোচনারও তো কিছু নেই। তার পরও অযথা আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও লিখেছেন, অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটার বা যেকোনো পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজের অধিকার। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, সময়টা এসে গেছে।
তামিম ইকবাল বলেন, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তরিকভাবেই আমাকে ফেরার জন্য বলেছে। নির্বাচক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমাকে এখনও উপযুক্ত মনে করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আমি নিজের মনের কথা শুনেছি।
তিনি বলেন, ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল। যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি। তার পরও আমি যেখানেই গিয়েছি, ক্রিকেট ভক্তদের অনেকে বলেছেন, আমাকে আবার জাতীয় দলে দেখতে চান। তাদের ভালোবাসার কথা ভেবেছি আমি। আমার ঘরেও একজন অনুরাগী আছে। আমার ছেলে কখনও আমাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার মাকে বারবার বলেছে, বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়।
জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ভক্তদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ছেলেকে বলছি, তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।
২০২৩ সালে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালীন আচমকা সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন তামিম। তখন তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। এই সময় তুমুল আলোড়ন তৈরি করে এই ঘটনা। পরদিন ঢাকায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তিনি, বেরিয়ে এসে জানান সিদ্ধান্ত বদলের কথা।
এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দুই ম্যাচ খেলেন তিনি। তবে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার দূরত্বের খবর ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিয়ে নেয়। তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গগত, ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তামিমের। বাংলাদেশের জার্সিতে শেষ ওয়ানডে খেলেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের ঘরের মাঠ মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয় টি টোয়েন্টিতে। দলের হয়ে সবশেষ ম্যাচ খেলেন ২০২০ সালে ৯ মার্চ ঘরের মাঠ মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয়। ঘরের মাঠ মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল শেষ ম্যাচ খেলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে তামিম ৩৯১ ম্যাচ খেলেন (টেস্ট ৭০, ওয়ানডে ২৪৩ ও টি টোয়েন্টি ৭৮)। যথাক্রমে ৫ হাজার ১৩৪, ৮ হাজার ৩৫৭ ও ১ হাজার ৭৫৮ রান করেন। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তার সেঞ্চুরি সংখ্যা ২৫টি। যার মধ্যে টেস্টে ১০, ওয়ানডেতে ১৪ ও টি টোয়েন্টিতে একটি।