January 23, 2025 - 7:29 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeজাতীয়"বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক" নির্মাণে বাতিলের সুপারিশ

“বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক” নির্মাণে বাতিলের সুপারিশ

spot_img

তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে সংরক্ষিত বন লাঠিটিলা। এ বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আগামী ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির নির্বাহী সভায় (একনেক) প্রকল্পটি বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপিত হবে। পরিকল্পনা কমিশনসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে প্রকল্পটির অসঙ্গতি তুলে ধরে ‘বন কেটে সাফারি পার্ক’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।

সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো.শাহাব উদ্দিন ২০২৩ সালে প্রকল্পটি জোর খাটিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেন। তার নির্বাচনী এলাকার ভোট নিশ্চিত করতেই প্রকল্পটি অনুমোদন করান তিনি। তখন পরিকল্পনা কমিশনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হলে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ও সংকুচিত করেন তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকল্পটিকে জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় বাতিলের সুপারিশ করেছে। ২০২৩ সালের ৯ই নভেম্বর পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটিতে অনুমোদন দেয় একনেক। অবশ্য শর্তসাপেক্ষে এটি অনুমোদিত হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রকল্পটি প্রথম পর্যায় হিসেবে অনুমদিত হয় তখন।

প্রকল্পটির সব পর্যায় শেষ করার জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। কমলা শ্রেণির (সতর্কতা পর্যায়ের) প্রকল্পটি নির্মাণে বন বিভাগ চলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল। এটিকে তারা সবুজ শ্রেণির প্রকল্প উল্লেখ করে বলেছিল, এটির জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র লাগবে না। বনের গাছপালা ধ্বংস হবে বলে ‘সাফারি পার্ক’ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবেশবীদ।

সূত্র বলছে, পরিকল্পনা কমিশন থেকে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানোর জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়বে কি না তা নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই প্রকল্পটির অনুমোদন বাতিলের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাঠিটিলা বনের যে স্থানে সাফারি পার্কটির প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য অঞ্চলের হটস্পটের অন্তর্গত টাইগার সার্ভের একটি অগ্রাধিকারমূলক এলাকা। তাছাড়া এটি হাতির আন্তঃসীমান্ত সঞ্চালন পথ (করিডর)।

মন্ত্রণালয় জানায়, সাফারি পার্কটি নির্মিত হলে লাঠিটিলাসহ সমগ্র বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কমিটির পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সাফারি পার্ক প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ করেছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি বলেছে, সবার মতামত ও বিভিন্ন সমীক্ষা পর্যালোচনার পর এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পার্কটি নির্মিত হলে লাঠিটিলাসহ সমগ্র বনাঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সুপারিশে আরও রয়েছে, সমগ্র পাথারিয়া হিল রিজার্ভের জীববৈচিত্র্যকে আমলে নিয়ে, জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রস্তাবিত সাফারি পার্কের ফলে সৃষ্ট প্রভাবগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এবং স্থানীয় অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কমিটি মনে করে, প্রাকৃতিক বনে সাফারি পার্ক নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয়। জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক প্রকল্পটি বাতিলের জন্য কমিটি সুপারিশ করছে।

৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ প্রকল্পটি ছিল প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে ২৭০ একর এলাকায় কোর সাফারি পার্কসহ সাফারি কিংডম স্থাপন করার জন্য সাফারি পার্কের মাস্টার বাউন্ডারি, কোর সাফারি ও সাফারি কিংডমের সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ অস্থায়ী বেষ্টনী, আরসিসি বাঁধ, রিটেইনিং ওয়াল, বিটুমিনাস রোড, গাড়ি ও বাস পার্কিং, প্রাণী হাসপাতাল ও গুদামঘর, অভ্যন্তরীণ মেকাডাম সড়ক, হাতি দেখার প্ল্যাটফর্ম ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটরসহ সাবস্টেশন নির্মাণের কথা ছিল।

সাফারি পার্কে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভিসহ সিকিউরিটি সিস্টেম, আইটি ব্যবস্থাসহ এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম, সাউন্ড সিস্টেম, ডিজিটাল টিকেটিং ব্যবস্থা প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণের কথাও ছিল।

পরিবেশ ধ্বংসের যত প্রকল্প
পাহাড় কেটে আবাসিক প্রকল্প: ‘চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির পরিবেশ ছাড়পত্র ছিল না। ক্ষমতা খাটিয়ে সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ সে ছাড়পত্র আদায় করেন। ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার প্রকল্পটির ৭০ শতাংশ পাহাড় ও ৩০ শতাংশ জলাধার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে ছয় কিলোমিটার সড়ক তৈরি করতে সাবাড় করা হয়েছে ১৫টি পাহাড়। পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার জরিমানা করার পরও ফৌজদারহাট- বায়েজিদের এ সংযোগ সড়ক তৈরি থেকে পিছু হটেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট পয়েন্ট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত এ সড়ক নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয় ১৯৯৭ সালে। প্রকল্পব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩২০ কোটি টাকায়।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন বা জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। কিন্তু যশোরে ইপিজেড করার ক্ষেত্রে এ আইনের তোয়াক্কা করা হয়নি। অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের ধলার বিলের ১৫ হাজার বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। এটি এখনো বহাল রয়েছে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এটি বাতিল করা প্রয়োজন মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জলাভূমি ভরাট করে নেওয়া হয় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প। ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি মূলত প্রভাবশালীদের বালুর ব্যবসায় বাড়তি সুবিধা তৈরি করে দিতে নেওয়া হয়েছিল।

পাবনার ইছামতী নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার নামে একটি প্রকল্প নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ১ হাজার ৭৩৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে মানা হয়নি কোনো নিয়মনীতি। নদী, খাল খনন সিএস ম্যাপ অনুযায়ী করা হলেও প্রকল্পটি করা হবে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে। দখলদারদের উচ্ছেদ না করে কৃষিজমিতে নদী খনন করা হলে কমবে আবাদি জমি, ধ্বংস হবে বাস্তুব্যবস্থা

কৃষিজমিতে নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় বিগত সরকারের আমলে। ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির ক্ষেত্রেও পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপিতে।

হবিগঞ্জের সদর উপজেলায় ৩০ একর জমিতে মেডিকেল, নার্সিং কলেজ এবং হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। এর প্রায় ৫ একর জমি খাল ও বিল। বাকি ২৫ একর দুই ফসলি জমি। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি যে এলাকায় হচ্ছে সেটি ‘লাল শ্রেণিভুক্ত’। এ শ্রেণির প্রকল্পে আবশ্যিকভাবে আইইই (ইনিশিয়াল এনভায়রনমেন্টাল এক্সামিনেশন), ইআইএ (এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যাসেসমেন্ট) ও ইএমপি (এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান) করতে হয়। এটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ...

বগুড়ায় রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে একটি রাস্তা নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ এসেছে ঠিকাদার জাহিরুল ইসলাম নিম্নমানের ইট,...

কনফিডেন্স সিমেন্টের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসির পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ৩০ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই...

ফাঁকা বাসায় ডেকে নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, অতঃপর

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সদর উপজেলায় এগারো বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার মো.শাহাজাহান (৬৫) নোয়াখালী পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম...

গ্রাহকপ্রিয়তার শীর্ষে উঠার প্রত্যয়ে ওয়ালটন ক্যাবলসের ‘বিজনেস পার্টনার্স মিট-২০২৫’ অনুষ্ঠিত

কর্পোরেট ডেস্ক: ‘ওয়ালটন ক্যাবলস- নিরাপদ আগামীর সংযোগ’ স্লোগানে গাজীপুরের চন্দ্রায় দেশের সুপারব্র্যান্ড ওয়ালটনের হেডকোয়ার্টার্সে উৎসবমুখর পরিবেশে ওয়ালটন ক্যাবলসের ‘বিজনেস পার্টনার্স মিট-২০২৫’ শীর্ষক বার্ষিক সম্মেলন...

চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইন্সটিটিউটের ৫টি চেয়ার মেরামতে খরচ ৬২ হাজার!

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: একের পর এক বেরিয়ে আসছে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইন্সটিটিউটের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। এবার আরও ভয়াবহ অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। মাত্র ৫টি...

নোয়াখালীতে থানার পুকুরে পড়ে ছিল লুট হওয়া চায়না রাইফেল

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর চাটখিল থানা থেকে লুট হওয়া একটি চায়না রাইফেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসম্বের) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাটখিল থানার পুকুর থেকে...

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য সরবরাহে উচ্চমূল্যে টেন্ডার পেতে চক্রান্ত, ছড়ানো হচ্ছে অপতথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পুরাতন দরে রোগীদের খাদ্য সরবরাহ থাকায় বর্তমান বাজারদর তুলনায় বেশী খাবার পাচ্ছেন এতে রোগী ও সরকার উভয়ই লাভবান...