স্পোর্টস ডেস্ক : তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ের ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে মিরাজ-তাসকিনরা।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) কিংসটাউনে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৯ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৮.৩ ওভারে ১০২ রান গুটিয়ে যায়।
বাংলাদেশের দেয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইন্ডিজকে জোড়া ধাক্কা দেন তাসকিন। ওভারের প্রথম ও পঞ্চম বলে ফিরিয়েছেন ব্রান্ডন কিং (৫ বলে ৮) ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে (৪ বলে ০)। চতুর্থ ওভারে জনসন চার্লসকে (১৪) এলবির ফাঁদে ফেলেন শেখ মাহেদি।
এরপরেই স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নিকোলাস পুরান (৫)। স্বস্তি নিয়েই পাওয়ারপ্লে শেষ করে সফরকারীরা। আগের ওভারেই রোভম্যান পাওয়েলের ক্যাচ ছাড়েন সৌম্য। কিন্তু পরের ওভারে কোনও ভুল হয়নি মিরাজের। হাসান মাহমুদের দারুণ ডেলিভারিতে তালুবন্দি হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। শূন্য রানে জীবন পাওয়া পাওয়েল ৭ বলে এক চারে করেন ৬।
ক্যারিবিয়ানদের উইকেট শিকারের মিছিলে যোগ দিয়েছেন পেসার তানজিম হাসানও। ৮.৩ ওভারে নতুন ব্যাটার রোমারিও শেফার্ডকে ক্যাচ আউটে ফিরিয়েছেন তিনি। ৫ বল খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। ৪২ রানে স্বাগতিকদের ৬ উইকেট তুলে নেওয়ার পর প্রতিরোধ গড়েন রোস্টন চেজ ও আকিল হোসেন।
হাসানকে টানা দুই ছক্কা মেরে ম্যাচে ফেরে উইন্ডিজ। তবে পরের ওভারেই ডেঞ্জারম্যান চেজকে তুলে নেন রিশাদ। ৩৪ বলে ৩২ রান করে থামেন চেজ। পরের বলেই মোতিকে ফেরান রিশাদ। হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলেও তা হতে দেননি আলজারি জোসেফ। তবে জোসেফকে পরের ওভারেই ফিরিয়েছেন তানজিম সাকিব। শেষ পর্যন্ত ১০২ রানেই থমকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সেন্ট ভিনসেন্টে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতেই মাত্র ১১ রানেই ২ উইকেট হারানোর পর পুরো ইনিংসেই দলকে টেনে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটাররা। লিটন দাসের ব্যর্থতা অব্যাহত রয়েছে। ১০ বল খেলে মাত্র ৩ রান করে আকিল হোসেনের বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে দলীয় ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
লিটনের বিদায়ের পর দ্রুতই বিদায় নেন তানজিদ হাসান তামিম। রোস্টন চেজের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মাত্র ৪ বলে ২ রান করেন। প্রথম ধাক্কা সামাল দিতে সৌম্য সরকার এবং মেহেদি হাসান মিরাজ কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। তবে তাদের জুটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। সৌম্য ১৭ বলে ১৬ রান করে আউট হলে দলীয় ৩৯ রানে ভেঙে যায় এই জুটি। তার বিদায়ের পরই মিরাজও ২৫ বলে ২৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
সৌম্য ও মিরাজের বিদায়ের পর দ্রুতই পতন ঘটে দলের নিচের দিকের ব্যাটারদের। রিশাদ হোসেন ৪ বলে ৫ রান করে গুড়াকেশ মোতির বলে বোল্ড হন। এরপর মেহেদী হাসান (১১ বলে ১১ রান) এবং জাকের আলী (২০ বলে ২১ রান) দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে ব্যর্থ হন।
৮৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন বেশ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপের মধ্য থেকেই দারুণ এক ইনিংস খেলেন শামীম হোসেন পাটওয়ারী। শেষ মুহূর্তে তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে ২৩ বলে ৪১ রানে জুটি গড়েন শামীম। দুই চার ও দুই ছক্কায় ১৭ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন শামিম পাটোয়ারি। অন্য প্রান্তে ১১ বলে ৯ রানে অপরাজিত সাকিব। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। তারপরও শঙ্কা ছিল এত কম রান নিয়ে জিততে পারবে তো টাইগাররা। কিন্তু বল হাতে সব সমীকরণ পাল্টে দেন তাসকিন-সাকিব-রিশাদ-শেখ মাহেদিরা। এতে করে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জয় পায় ২৭ রানে। এ জয়ের ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ৬ বছর পর সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সবশেষ ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন গুড়াকেশ মোতি। একটি করে নিয়েছেন আকিল হোসেন, রোস্টন চেজ, আলজারি জোসেফ ও ওডেব ম্যাককয়।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন শামীম হোসেন। সিরিজের শেষ ম্যাচ আগামী ১৮ ডিসেম্বর শুক্রবার।
এর আগে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা সিরিজ হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্যারিবিয়ান মাটিতে পা রেখেছিল পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে। সেখানে দুই টেস্টের সিরিজ ড্রয়ের পর আবার ওয়ানডেতে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জায় পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু মধুর প্রতিশোধের উপলক্ষ্য হয়ে এলো টি-২০ সিরিজ। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটি জিতে ইতোমধ্যে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছে লিটন দাসের দল। ক্যারিবিয়ানদের তাদেরই মাটিতে আজ ২৭ রানে হারিয়ে অর্ধযুগের এক আক্ষেপও মিটিয়েছেন লিটন-সোম্য-মিরাজরা। সেইন্ট ভিনসেন্টের অ্যারন্স ভ্যালেতে লো স্কোরিং ম্যাচটি জেতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর পর ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজ জয় হলো টাইগারদের।