মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সড়কে আরও এক জোড়া বাড়তি ট্রেন নামনোর কথা জানিয়েছে রেলওয়ে। পাশাপাশি স্থায়ী করা হচ্ছে বর্তমানে চলাচলরত বিশেষ ট্রেন। বিশেষ ট্রেন স্থায়ী করার এবং ট্রেন বাড়ানোর প্রস্তাব রেলওয়ের মহাপরিচালককে পাঠিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। এই প্রস্তাবে দুই জোড়া ট্রেনের নতুন নামও রাখা হয়েছে। তবে কোচ ও ইঞ্জিনসংকটের কারণে বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন চলাচল খুব শিগগির শুরু হচ্ছে না।
এই বিশেষ ট্রেন স্থায়ী না করার কারণে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই ট্রেনটি স্থায়ী বা নিয়মিত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অবশেষে বিশেষ ট্রেনটি স্থায়ী করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।
ট্রেনটি স্থায়ী করার অনুরোধ জানিয়ে ১১ ডিসেম্বর রেলওয়ের মহাপরিচালককে চিঠি দেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। ওই চিঠিতে বলা হয়, যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ট্রেন স্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকার সামাজিক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অনুরোধ জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি আরও এক জোড়া ট্রেন যোগ করে এখন দুই জোড়া ট্রেন পরিচালনার প্রস্তাব করা হলো।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত বর্তমান বিশেষ ট্রেনের নাম ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ এবং নতুন ট্রেনের নাম ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ৭৪৩টি আসন থাকবে। ১৬টি কোচ নিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল করবে।
রেলওয়ের নতুন প্রস্তাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে বিশেষ ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। কক্সবাজারে পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়।
প্রস্তাবিত দুই জোড়া ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছাড়বে সকাল সাড়ে ৬টায়। কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ১০টায়। ওই ট্রেন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার স্টেশন ছেড়ে যাবে। এটি চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বেলা সোয়া ২টায়।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বেলা পৌনে তিনটায় আরেকটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ওই ট্রেন কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৭টায় আবার ছাড়বে। সেটি চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ১০টায়। এই দুই জোড়া ট্রেন যাত্রাপথে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজারে নতুন রেলপথ চালু হওয়ার পর এটি নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত পর্যটন শহর কক্সবাজারে ট্রেনে করে যাওয়ার জন্য টিকিটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। আর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় কম। এ জন্য এই রুটে আরও বেশি ট্রেনের চাহিদা রয়েছে।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর ট্রেন চালুর পর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৩ জন। রেলের আয় হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৭২ কোটি টাকা আসে তিনটি নিয়মিত ট্রেন থেকে এবং বাকি টাকা বিশেষ ট্রেন থেকে। এর মধ্যে কক্সবাজার স্পেশাল ৯ ও ১০ ট্রেন নামে পরিচিত এই ট্রেন থেকে রেলওয়ের আয় হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ টাকা। যাত্রী চড়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬২ জন।
ট্রেন স্থায়ী করা ও বাড়ানোর প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) এ বি এম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, কক্সবাজার রুটে ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন ও কোচসংকটের কারণে নতুন ট্রেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে বিশেষ ট্রেন চলছে, তা দিয়ে দুই জোড়া ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব দ্রুত অনুমোদন করা হবে বলে তাঁরা আশাবাদী। ট্রেন বাড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।