তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে অবাধে টিলা কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটার ফলে ওই ৩টি গ্রামের ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে গড়ে ওঠা আনুমানিক ২০টি বাড়িঘর ভারী বর্ষণ কিংবা ভূকম্পনে টিলা ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী (ভাঙ্গারপার) গ্রামের মৃত আব্দুস সত্তারের ছেলে আব্দুল রহিম, পশ্চিম গোয়ালবাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে ছমির আলী (৫৫), একই গ্রামের হালিম মিয়ার ছেলে তাজুল ইসলাম (৪৫), দীর্ঘদিন ধরে একটি ভূমিখেকো চক্র অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসি কর্তৃক অভিযোগ পাওয়া গেছে, ছমির আলীকে এত বিশাল টিলা কর্তনের কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন উনার শ্যালক পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের জামকান্দি গ্রামের যুবলীগ নেতা কাওছার আহমদ অরফে কয়েছ সে থানা ও উপজেলায় বলেছে তার কাছে পারমিশন পেপার আছে। পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের হালগড়া গ্রামের মৃত আজমল আলীর মেয়ে রিপা বেগম। প্রতিদিন এসব এলাকার বিভিন্ন টিলা থেকে প্রতি ট্রাক মাটি ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উল্লেখ্য পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের জামকান্দি এলাকার মৃত কলা বেপারির ছেলে যুবলীগ নেতা কাওছার আহমদ অরফে কয়েছ নামক স্থানীয় এক কথিত গরুচোর, সন্ত্রাস তার ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাড়ী ইউপির পশ্চিম গোয়ালবাড়ী গ্রামে নিজ দায়িত্বে কয়েকটি স্পটে একযোগে টিলা কেটে মাটি বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকেই সে নিজ এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন জায়গায় সে নিজেকে বিভিন্ন পরিচয়ে প্রতারনা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে।
পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে টিলা কাটার গোপন সংবাদের অভিযোগে সরজমিনে উক্ত গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাটি কাটার কারণে এসব ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে অপরিকল্পিতভাবে ২০টি বাড়ি ঘর গড়ে উঠেছে এবং যে কোনো সময় ধসে পড়ে ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে। এসব বাড়ি ঘরে বসবাসকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বর্ষা মৌসুমের সময় যে কোনো মুহুর্তে টিলা ধসে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এমন আশংকায় থাকেন বাসিন্দারা। উল্লেখ্য ১৯৯১ ও ৯২ সালে টিলা কাটার সময় কালিনগর গ্রামে মাটি চাপায় ২ শ্রমিক নিহত হন। তৎকালীন ও পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঝে মধ্যে টিলা কাটা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই ভুমিখেকো চক্রটি আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে।
জুড়ী টিএন খানম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ আহমেদ বলেন, অবাধে টিলা কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য এবং হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকল্পে প্রশাসন তথা সচেতন জনগোষ্ঠী এগিয়ে আসার প্রয়োজন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা সহকারী পরিচালক মোঃ মাইদুল ইসলাম জুড়ীতে টিলা কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের নাম সংগ্রহ করেছি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।