স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বড় হার দিয়ে সিরিজ শুরু করে সফরকারী বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ২০১ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি টাইগারদের জন্য সিরিজ রক্ষার ম্যাচ ছিলো। সিরিজ বাঁচাতে বাংলাদেশকে জিততেই হতো। জ্যামাইকায় এমন ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হেসেখেলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বোলিংয়ে দারুণ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল ছিল গোটা দল। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসেছে ১০১ রানের চমৎকার জয়।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) জ্যামাইকায় কিংস্টন টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের ১১০ রানে হারিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এতে টাইগার বাহিনী সিরিজ শেষ করেছে ১-১ সমতায়।
কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কেননা এই মাঠে ২১২ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। এবার উইন্ডিজের লক্ষ্য ছিল ২৮৭ রানের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারানোর পেছনে দ্বিতীয় ইনিংসে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন তাইজুল ইসলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই স্পিনার তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম ফাইফার। তার স্পিন ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়েছে ক্যারিবীয়রা। ৫০ রানে পাঁচ উইকেট তুলে নেন তাইজুল। যাতে, ১৮৫ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
টানা পাঁচ হারের পর সাদা পোশাকে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাইজুলের কাছে এটি বিশেষ কিছু। তার মতে, গোটা দলই জয়ের জন্য মুখিয়ে ছিল। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সম্মিলনে এসেছে এই জয়। ম্যাচ শেষে আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিসিবির দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় এসব কথা বলেন তাইজুল।
তাইজুল বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের দলের জন্য এটি অনেক বড় পাওয়া। দলে বেশিরভাগ তরুণ খেলোয়াড় ছিল। কয়েকজন আছেন আট-দশ বছর ধরে খেলছে। সবার মধ্যে ভালো রসায়ন ছিল। জয়ের একটা তাড়না ছিল। বিশ্বাস করতাম, ম্যাচটা আমরা জিতব। সেজন্য সবাই যে চেষ্টাটা করেছে, সেটি অতুলনীয়।’
প্রথম টেস্টে ২০১ রানের বিশাল ব্যবধানে হার। দ্বিতীয় টেস্টের শুরুতেও নড়বড়ে ব্যাটিং। মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি টেস্ট হারের সামনে দাঁড়িয়ে; কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্বে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৬ রানে অলআউট করে প্রথম ইনিংসেই ১৮ রানের লিড পেল বাংলাদেশ।
এরপর ব্যাট করতে নেমে ব্যাটাররা মোটামুটি দৃঢ়তার পরিচয় দিলেন। সাদমান ইসলাম (৪৬), শাহাদাত হোসেন দিপু (২৮) মেহেদী হাসান মিরাজ (৪২) ও লিটন দাসের (২৫) পর জাকের আলী অনিক। বিশেষ করে জাকের আলি অনিক দারুণ ব্যাটিং করলেন। তার ৯১ রানের ওপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রান হলো এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ২৮৭ রানের বড় লক্ষ্য বেঁধে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের বোলাররা রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে দেখা দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের সামনে। প্রথম ইনিংসে পেসার নাহিদ রানা ছিলেন বড় আতঙ্ক। তিনি নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই আতঙ্ক নিয়ে হাজির হলেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনিও নিলেন পাঁচ উইকেট। তার এই বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৮৫ রানে অলআউট।
২৮৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫৭ রানের মধ্যে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখান তাইজুল ও তাসকিন আহমেদ। মিকাইল লুইস ৬ ও কাসি কার্টি ১৪ রান করে আউট হন। তবে কেভাম হজ ও ক্রেইগ ব্রাফেটের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই দুই ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তাইজুল।
ব্রাফেট ৪৩ ও হজ ৫৫ রান করে আউট হন। তাদের বিদায়ের পর আর কেউ থিতু হতে পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ১৮৫ রানে অলআউট হয় ক্যারিবিয়ানরা।
তাইজুল নেন ৫টি উইকেট। এছাড়া তাসকিন ও হাসান মাহমুদ নেন ২টি করে উইকেট।
১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের আবার হারাতে পারলো বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে সর্বশেষ সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ক্যারিবীয়দের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৬৪ ও ২৬৮ (জাকের আলী অনিক ৯১, সাদমান ইসলাম ৪৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ৪২, শাহাদাত হোসেন দিপু ২৮; কেমার রোচ ৩/৩৬, আলজারি জোসেফ ৩/৭৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৬ ও ১৮৫ (কাভেম হজ ৫৫, কার্লোস ব্রাথওয়েট ৪৩; তাইজুল ইসলাম ৫/৫০, হাসান মাহমুদ ২/২০, তাসকিন আহমেদ ২/৪৫, নাহিদ রানা ১/৩২)।
ফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম।