বাদল হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি : চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রোগীরা। শয্যা সংকটের কারণে দুঃসহ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে রোগী এবং
তাদের স্বজনদের। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নার্স, চিকিৎসক
সহ অন্যান্য দায়িত্বরতরা।
চিকিৎসা নিতে এসে শিশু রোগীদের স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ফ্যানগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগি হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এছাড়া নানা সমস্যার মধ্যে বাড়তি দুর্ভোগ হচ্ছে ‘অসহনীয় দুর্গন্ধ’। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে শিশুদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪০টি। সরেজমিনে দেখা
গেছে, একটি শয্যায় ৪ জন করে শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে।
এছাড়া দুটি বারান্দার মেঝেতে বিছানার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন অসংখ্য শিশুরোগী। শিশুরোগীদের
পাশাপাশি তাদের সাথে থাকা স্বজনরাও পড়েছেন বিপাকে। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছে রোগীদের সাথে থাকা স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ হয়ে পড়া অনেক স্বজনদের মধ্যে কেউ বাড়ি ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের ‘মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি ইউনিটে’ গিয়ে দেখা গেছে, একেকটি শয্যায় ৪ জন করে শিশুরোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক রোগীর সাথে অভিভাবক কিংবা কোনো স্বজন রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীর স্বজনদের সাথে আলাপচারিতায় জানা গেছে, ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ নিউমোনিয়ায় আক্তান্ত। এছাড়া কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী রয়েছে।
হাসপাতাল সুত্র জানায়, বিভাগের ‘মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি ইউনিটে সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ১৬৫ জন শিশুরোগী ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে ১৩৬ জন নিউমোনিয়া এবং বাকী ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে সবাই শিশু। এছাড়া ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৮ জন নারী এবং শিশু রয়েছে ৩ জন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে- মোট ৪০ টি বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৬৫জন। এছাড়া ভিতরে-বাইরে সর্বত্র ‘ঠাসাঠাসির মধ্যেও প্রতিদিনই নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের ‘মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বেডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৪ জন শিশুর মধ্যে একজনের নাম মুন (১০)। বেডে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাত-পা গুটিয়ে আড়াআড়ি করে শুয়ে আছে। শিশুরোগীদের সাথে থাকা স্বজনদের মধ্যে কেউ দেয়ালে আবার কেউ বেডের সাথে মাথা চেপে বসে
আছেন। শিশুরোগী মুনের মা মুক্তা বেগম জানান, তাদের বাড়ি দুমকী উপজেলা সদরে। তিনি বলেন, সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসে আমি নিজেও এখন রোগী হয়ে গেছি। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দু’মাস বয়সী সন্তান ঈশানকে চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী সদর উপজেলার খলিশাখালী থেকে এসেছেন মুক্তা রাণী। তিনি বলেন ঈশানের মা ঈশিতা রাণী হাসপাতালের অসহনীয় পরিবেশের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি দু’মাস বয়সী গোকুলের মা অনিতা রাণী এবং ৩ বছর বয়সী আনা’র মা মাহমুদা বেগম এসেছেন রাঙ্গাবালী চরবিশ্বাস থেকে। তারা সকলেই একই ধরণের চরম দুর্ভোগের কথা জানিয়ে
বলেন, একটি বেডে ৪জন রোগী। হাত-পা গুটিয়ে আড়াআড়ি হয়ে শুতে হয়। এরপরেও শরীরের অর্ধেক থাকে বেডের বাইরে। এছাড়া ওয়ার্ডের ভিতরে এবং বারান্দার সর্বত্র ঠাসাঠাসি অবস্থায় চলাফেরার নড়াচারারও উপায় নেই। এর মধ্যে প্রচন্ড গরম এবং অসহনীয় দুর্গন্ধে নাকাল হয়ে পড়েছি। এঅবস্থায় কি করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলরুবা ইয়াসমীন লিজা বলেন, রোগীদের এমন দুর্বিসহ পরিস্থিতি দেখে তিনিও কষ্ট পাচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তার কিছুই করার নেই বলে জানান তিনি।