সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৬ ইউনিয়নের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সরকার ঘোষিত প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে পুরো চরাঞ্চলে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন ও সংযোগ প্রদান করা হলেও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে একেবারেই অপ্রতুল। ফলে দিনরাত ২৪ ঘন্টার ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টায় বিদ্যুৎ থাকেনা এসব এলাকায়। এ নিয়ে চরাঞ্চলবাসি চরম বেকায়দায় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে কাজিপুর থেকে যমুনার চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না হওয়ায় জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্থাপন করা হয়। সঞ্চালন লাইন স্থাপন শেষে বিদ্যুতের সংযোগ প্রদান করা হয়। জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া, তেকানি, চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর,খাসরাজবাড়ি ও মনসুরনগর ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসে। বর্তমানে এই সংযোগের সংখ্যা ২৯ হাজার ৪১২টি। এরমধ্যে আবাসিক ২৬ হাজার ৫৮৩, বাণিজ্যিক ১ হাজার ৫১৯, শিল্প লাইন ১১ টি এবং সেচ সংযোগ রয়েছে ২২টি। শুরুতে সরিষাবাড়ির বরাদ্দ থেকে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
সরিষাবাড়ি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে কাজিপুরের ৬ ইউনিয়নে বিদ্যুতের মোট চাহিদা হচ্ছে প্রায় ১০ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে ১ থেকে মাত্র ২ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ। এর ফলে রাতদিন মিলে ছয় থেকে আট ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না এসব এলাকার গ্রাহকগণ। এদিকে চরাঞ্চলে যাতায়াতের জন্যে বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অটোভ্যান, চায়না অটোভ্যান, ও বিদ্যুৎ চালিত রিক্সা। এসব পরিবহনগুলো দিনভর চলার পরে রাতে বিদ্যুতের সাহায্যে চার্জ করা হয়। ফলে কাগজে কলমে একরকম বলা হলেও মূল চাহিদার পরিমাণ অনেক বেশি। এরফলে লোডশেডিং আরও বেড়ে গিয়ে ৬ ইউনিয়নবাসির বিদ্যুৎসেবা নাজুক অবস্থায় পড়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে এসব এলাকায় একদিকে বাড়ছে সংযোগ গ্রহিতার সংখ্যা, সেইসাথে বাড়ছে অটোভ্যান গাড়ির সংখ্যা। ফলে চাহিদা বেড়েই চলেছে। এছাড়া জীবন যাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় টিভি, ফ্রিজ, ইস্ত্রি, রাইচকুকার, কারি কুকার, প্রেসার কুকারসহ বিদ্যুৎ নির্ভর এসব নিত্য ব্যবহায্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সরিষাবাড়ি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, সরকারিভাবে এই এলাকার জন্যে নতুন করে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এরসাথে সেবার বিষয়টিও রয়েছে একেবারে নাজুক অবস্থায়। বিশাল চরাঞ্চলের এইসব লাইন সচল রাখা ও গ্রাহকের সেবার জন্যে রয়েছে তিনটি অভিযোগ কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে নাটুয়ারপাড়া, রূপসা এবং ভদ্রশিমুল। অফিসে তিনটিতে নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। কর্মিদের যাতায়াত সমস্যাও রয়েছে। বিশেষ করে বন্যার সময়ে তাদের যাতায়াতের জন্যে দরকার নৌকা অথবা স্পিডবোর্ট। কিন্তু এসব কেন্দ্রে তার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে গ্রাহকের সেবা দিতে কর্মিদের দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত সময় লাগে।
নাটুয়ারপাড়ার আফজাল হোসেন মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালক আয়নাল হক জানান, চরের বিদ্যুৎ নামে আছে, কামে নাই। শুরুতে কিছুটা ভালো সেবা পেলেও দিনদিন লোডশেডিংয়ের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে ঘরের ফ্রিজ, টিভি। চরের মানুষ এর কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
চরগিরিশ ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রকৌশলী এসএম ফরিদুল ইসলাম জানান, আমরাতো এলাকায় নিয়মিত থাকি না। বিভিন্ন পালা পার্বনে যখন আসি তখন বিদ্যুৎ সমস্যায় বাচ্চাদের নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। দিনরাত মিলে ছয় ঘন্টাও বিদ্যুতের সেবা মেলে না।
নাটুয়ারপাড়ার বাজারের ওধুষ ব্যবসায়ী আতাউর রহমান জানান, চাহিদামতো বিদ্যুতের সরবরাহ না পাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রাখার জন্যে জেনারেটর অন করে ব্যবসা করে যাচ্ছি। আমার মতো অনেক ব্যবসায়ীই বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। এর ফলে খরচও বেড়ে গেছে অনেক।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সরিষাবাড়ি জোনাল অফিসের ডিজিএম দেলোয়ার হোসেন খান জানান, কাজিপুরের চরাঞ্চলের জন্যে মোট চাহিদা প্রায় ১০ মেগাওয়াট। তবে চার থেকে পাঁচ মেগাওয়াট পেলেও সহনীয় পর্যায়ে লোড ম্যানেজমেন্ট করে চালানো যেতো। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক থেকে দুই- আড়াই মেগাওয়াট। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বরাদ্দ বাড়লে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’