বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে চাঁদাবাজীর অভিযোগে আটক কথিত ৩ সাংবাদিকসহ ৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আরো ২/৩জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে শেরপুর উপজেলার শুবলি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে আজ তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ।
মামলার আসামিরা হলেন, কথিত সাংবাদিক বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে আব্দুল হালিম, বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকার রুস্তম আলী শেখ এর ছেলে মুক্তার শেখ, শেরপুর উপজেলার উত্তরসাহাপাড়া’র মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে রায়হান পারভেজ ও শেরপুরের ঘুঘু বটতলা ঘোলাগাড়ি এলাকার মোঃ মাসুদ।
এর আগে সোমবার বেলা ১১টায় কথিত ওই তিন সাংবাদিকসহ আলোকিত সকাল নামক পত্রিকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ শুভলি উচ্চ বিদ্যালয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা ওই স্কুলের পেছন থেকে ২ বছর পূর্বে কর্তন করা ইউক্যালিপটাস গাছ সম্পর্কে খোঁজ খবর এবং জেরা করতে থাকেন শিক্ষকদের। তখন শিক্ষকরা তদেরকে জানান, স্কুলের কেউ গাছ কাটেনি। ওই গাছটি স্কুলের ছিলো না। ওটা ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় ছিলো। ওই জায়গার মালিক হাবিল নামক এক ব্যক্তি, তিনি তার গাছ নিজে কেটে নিয়ে গেছেন। এরপর তারা শিক্ষকদের কক্ষ থেকে বের হয়ে হাবিলের বাসায় গিয়ে হাবিলকে তার জমির দলিলপত্র দেখাতে বলেন। তখন হাবিল কাগজপত্র দেখাতে সময় চেয়ে তাদেরকে স্কুলে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন। ওই ৪ জন স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে যান। এরপর গতকাল প্রধান শিক্ষক স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন এ সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে জেরা করেন এবং তিনি ছুটির কোন দরখাস্ত দিয়েছিলেন কিনা সেটা জানতে চান এবং দরখাস্ত দেখতে চান।
এ সময় প্রধান শিক্ষক তাদেরক বলেন, তার এক আত্মীয় মারা যাওয়ায় তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে মৌখিক ছুটি নিয়েছেন। তখন তারা ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিলে তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিউজ করার হুমকি দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা স্কুলটিতে যান। স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে কয়েকজন তাদেরকে চিনতে পারেন, তারা গতকালও শেরপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজী করে গেছেন। আজ সোমবার তাদেরকে ওই দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে আরো কিছু টাকা চাঁদা বকেয়া ছিলো। সেই টাকা তাদের আজকে নিতে আসার কথা ছিলো। পরে গতকাল কালকের চাঁদাবাজী এবং আজকের চাঁদাবাজীর বিষয়টি নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় তারা ওই কথিত সাংবাদিকদের গণধোলাই দিয়ে আটকিয়ে রাখে। পরে শেরপুরের কথিত সাংবাদিক আবু বক্কর সিদ্দিক, মাসুদ, সেতু নামের তিন কথিত সাংবাদিক তাদেরকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে উত্তেজিত লোকজন আবু বক্করকে গণধোলাই দেয়। এ সময় সেতু ও মাসুদ পালিয়ে পায়। পরে ওই তিনজনকে জনগণ পুলিশে দেয়।
জানা গেছে, গতকাল ওই তিন কথিত সাংবাদিকসহ আবু বক্কর, সেতু, মাসুদ এবং লিটনের মোট ৭ জন শেরপুর উপজেলা শুবলি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৬৫০০ টাকা এবং হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১ হাজার টাকা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে চাদাবাজী করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) তাদের শুবলি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আজকে আরো ২০ হাজার টাকা এবং হুসনাবাদ সরকারি স্কুল থেকে আরো ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে যায়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।