মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। গর্ভকালীন ভাতার কার্ড ও স্কুলের সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনে দুর্নীতির পর এবার বের হয়েছে জন্ম নিবন্ধন ও পারিবারিক সনদ তৈরী করে দেয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, জন্ম নিবন্ধন ও পারিবারিক সনদ তৈরী করে দেয়ার জন্য সচিব জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই ব্যক্তির এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে এলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয় । এতো কিছুর হোতা সচিবের খুঁটির জোর নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের আটকুড়িয়া গ্রামের অন্তসত্তা ঝুমা সরকারের গর্ভকালীন ভাতা কার্ড করে দেয়ার জন্য ইউপি সচিব সেলিম মোল্লা ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আজাদ ৫ হাজার টাকা নেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কার্ড না পাওয়ায় ভুক্তভোগীর পক্ষে তার দেবর সুজন টিকাদার গত ২১মে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর রেশ না কাটতেই গোলাইডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সচিবের বিরুদ্ধে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বেই ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন সেলিম মোল্লা। এ ছাড়া এক লক্ষ টাকার ওই প্রকল্পে ৬১ হাজার টাকার সরঞ্জাম ক্রয় করে দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এনিয়ে গত ১১ জুন তার বিরুদ্ধে আবারো একাধিক জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এবার জন্ম নিবন্ধন ও পারিবারিক সনদ দেয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে সচিব সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে। তেলিখোলা গ্রামের মৃত চমক আলীর পুত্র ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলমের (৩৪) এ নিয়ে একটা ভিডিও প্রকাশ হয়। সেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার পারিবারিক সনদ ও মা-বাবার চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট তৈরী করে দিতে ইউপি সচিব সেলিম মোল্লা তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তারপরও সচিব তার কোনো কাজ না করে দিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে উল্টো হুমকি-ধমকি দেন। এতো অনিয়ম-দুর্নীতির পরেও সচিব সেলিম মোল্লা বহাল তবিয়তে থাকায় ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তারা অবিলম্বে সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
শনিবার (২৪ আগস্ট) অভিযোগকারী জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার চাচা মহর আলী বলেন, সচিব সাহেব খুব খারাপ লোক। টাকা নিয়েও আমার ভাতিজার কাজ করে দেননি। পরে সিংগাইর থেকে কাগজপত্র তৈরী করে আনা হয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি সচিব সেলিম মোল্লা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ভিডিওতে ছড়ানো অভিযোগটি পুরনো। আমি জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি নিয়েই কাজ করে দিয়েছি। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম দায়ের করা লিখিত অভিযোগের তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তার বলেন,যারা অভিযোগ করেছিল তারা তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার বসু বলেন, সচিবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট ডিসি স্যার বরাবর পাঠানো হয়েছে। নতুন করে অভিযোগ পেলে তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।