কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় কবলিত হয়েছে দেশের ১১টি জেলা। বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টি থামায় কিছু স্থান থেকে নামছে বানের পানি। তবে এখনও ৭টি নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার উপরে। বৃদ্ধির প্রবণতা আছে আরও ৪১টিতে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বলা হয়েছে, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি (ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মী পুর ও কক্সবাজার)।
১১ জেলায় মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন, মারা গেছেন ১৫ জন। পুরুষ ১৩ জন, নারী ২ জন। মারা যাওয়ার মধ্যে কুমিল্লায় ৪, ফেনীতে ১, চট্টগ্রামে ৪, নোয়াখালীতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ এবং কক্সবাজারে ৩ জন রয়েছেন।
তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩,১৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০ জন লোক এবং ১৮ হাজার ৯৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬৩৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান গতকাল মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের চলমান বন্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বন্যায় দেশের ৫৮৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮ লাখ মানুষ। বন্যায় মারা গেছেন ১৫ জন । এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ৪ জন, নোয়াখালীতে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১ জন, লক্ষীপুরে ১ জন ও কক্সবাজারে ৩ জন রয়েছেন।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে ফেনী শহর ও জেলার ৬ উপজেলা। জেলার ৯০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার কাজ করছে না। বিদ্যূত না থাকায় এই জেলার প্রায় সব এলাকা টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও তাদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ জন লোক ও ১৭ হাজার ৮৪৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এছাড়া, ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬৩৭টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩৫ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন চাল; কুমিল্লায় ৪৫ লাখ টাকা ও ২ হাজর ৬শ’ মেট্রিক টন চাল; ফেনীতে ৬২ লাখ টাকা, ২ হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন চাল ও ৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার; নোয়াখালীতে ৪৫ লাখ টাকা, ২ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার; সিলেটে ৪৫ লাখ টাকা, ২ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার; মৌলভীবাজারে ৩০ লাখ টাকা, ২ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার; হবিগঞ্জে ৩৫ লাখ টাকা, ২ হাজার ৪শ’ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার; ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন চাল; লক্ষ্মীপুরে ১০ লাখ টাকা, ৫শ’ মেট্রিক টন চাল; খাগড়াছড়িতে ১০ লাখ টাকা, ৫শ’ মেট্রিক টন চাল এবং কক্সবাজারে ২০ লাখ টাকা, ৫শ’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, দেশের সকল জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।
বন্যায় আক্রান্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডের সদস্যরা, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।
ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও লক্ষীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোষ্ট গার্ড ও বিজিবি জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।