কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। নতুন করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।
বন্যায় ৬ জেলার ৪৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩ পরিবারের ১৭ কোটি ৯৬ লাখ ২৪৮ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব এলাকায় সরকার ১ কোটি ৪২ লাখ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) চলমান বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘন্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
গত ২০ আগস্ট থেকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও মৌলভীবাজারসহ দেশের ৬ জেলার ৪৩ উপজেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে ১ হাজার ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১৭ হাজার ৮৮২ জন লোক ও ৩ হাজার ৪৮৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ৬ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৩০৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা, ৮ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন চাল, ৮ হাজার বস্তা শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১৫ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন চাল, কুমিল্লা জেলায় ২৫ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন চাল, ফেনী জেলায় ৪২ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৪শ’ মেট্রিকটন চাল ও ৩ হাজার বস্তা শুকনা খাবার, নোয়াখালী জেলায় ২৫ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন চাল, সিলেট জেলায় ২৫ লাখ টাকা ও ২ হাজার ১শ’ মেট্রিকটন চাল ও ৪ হাজার বস্তা শুকনা খাবার, মৌলভীবাজার জেলায় ১০ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন চাল ও ১ হাজার বস্তা শুকনা খাবার। এছাড়া দেশের সকল জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।
ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে।
এছাড়া বিজিবিসহ আরও নৌযান আনানো হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত বন্যা সম্পর্কিত জেলাভিত্তিক তথ্যানুযায়ী বন্যায় ফেনী জেলার ৬টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এখানে পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। বন্যার পানিতে ডুবে এই জেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৭৮টি, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ২০ হাজার জন ও মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ৭৬টি।
কুমিল্লা জেলার ১১টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত জনসংখ্যা ৪৭ হাজার ৭৭০ জন, আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮৭টি ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৩৯২ জন।
নোয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ২০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১২ লাখ ২ হাজার জন, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৪৫টি, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৭ হাজার ৭৫৩ জন, আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১ হাজার ৭৯৫টি ও মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ৮৮টি।
চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ২০ হাজার ১৭৫ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৯৫ হাজার ৯০০ জন, আশ্রয় কেন্দ্র খোলার হয়েছে ২৩২টি। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ আশ্রয় গ্রহণ করেনি। এখানে মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ১২৭ টি।
মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১২ হাজার ৯৬৬ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৬১ হাজার ৬৬০ জন।
খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪২২ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৮৭ হাজার ৭১৮ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১১৭টি, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭ হাজার ২৭৭ জন এবং আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১ হাজার ৬৯১টি এবং মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ১৮টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৮০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সূত্র-বাসস।